
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্যানিটারি প্রোডাক্ট কিনতে আর দাম দিতে হবে না। যে ব্র্যান্ডের বা যত দামের ন্যাপকিনই হোক না কেন, একেবারে বিনামূল্যেই দেবে দেশের সরকার। বিশ্বে প্রথমবার এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল এই দেশ–স্কটল্যান্ড।
দেশের সব মহিলার জন্যই প্যাড, ট্যাম্পন, মেনস্ট্রুয়াল কাপ বা অন্যান্য স্যানিটারি সামগ্রী বিনামূল্যে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কটিশ পার্লামেন্ট। ‘দ্য পিরিয়ড প্রোডাক্টস (ফ্রি প্রভিশন) স্কটল্যান্ড বিল’ আনা হয়েছিল আগেই। জানা গেছে, সেখানে ১১২টি ভোট পড়েছিল এর সপক্ষে। বিপক্ষে ভোট পড়েনি একটিও। গতকাল, মঙ্গলবার এই বিল পাশ হয় স্কটিশ পার্লামেন্টে।
দেশের সমস্ত কমিউনিটি সেন্টার, ইউথ ক্লাব ও ফার্মাসিগুলিতে স্যানিটারি প্যাড বিনামূল্যেই পাওয়া যাবে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলিতেও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখা হবে।
স্কটিশ লেবার হেলথের মুখপাত্র মনিকা লেনন বলেছেন, এই বিল হল একটি মাইল ফলক। সারা বিশ্বকে পথ দেখাবে। মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রথম বড় পদক্ষেপ নিল স্কটল্যান্ড। এই পদক্ষেপ লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচাবে। মহিলাদের অধিকার ও সুরক্ষা আরও সুনিশ্চিত করবে।
মনিকা বলছেন, খোলামেলা পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা করার সময় এসেছে। ঋতুস্রাব নিয়ে ঢাকাচাপা দেওয়ার সময় ফুরিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে মহিলাদের। স্যানিটারি ন্যাপকিন, হাইজিন নিয়ে আরও বেশি প্রচার দরকার। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রিটেনে প্রতি দশজন মেয়ের একজন প্রতিমাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারে না।
এই উদ্যোগ অবশ্য আজকের নয়। ২০১৮ সাল থেকেই স্কুল, কলেজগুলিতে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছিল দেশের সরকার। পরে এই ব্যবস্থাকেই পাকাপাকিভাবে দেশের সমস্ত মহিলাদের জন্যই কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতে ১ টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন
প্রধানমন্ত্রীর জনৌষধি কেন্দ্রগুলি থেকে মাত্র ১ টাকাতেই পাওয়া যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন। ‘সুবিধা’ ব্র্যান্ডের আওতায় গত বছর থেকেই কম দামে স্যানিটারি প্যাডের সুবিধা পাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার মহিলারা। সরকারি উদ্যোগেই দেশের ছ’হাজার জনৌষধি কেন্দ্র থেকে এক টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুবিধা পেয়েছেন পাঁচ কোটি মহিলা। এবার এই প্রকল্পেই গতি আনতে ১২ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এমনিতেই গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তবে শুধু প্রত্যন্ত এলাকা নয় শহরাঞ্চলেও ঋতুস্রাব ও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে অনেকের মধ্যেই। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারেন না বেশিরভাগ মহিলাই। ঋতুস্রাবের সময় আদিবাসী গরিব মেয়ে, বৌয়েদের ভরসা এক টুকরো কাপড় অথবা ছাই। ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষা দেখিয়েছিল দেশের মাত্র ৫০ শতাংশ মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন। তা-ও দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা প্রসারের পরে। ঋতুকালীন সময় মেয়েদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতার প্রচার করতে ইতিমধ্যেই নানা কর্মসূচী নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।