
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাখি না মানুষ? নাকি পাখির বেশে মানুষ?
না, কোনও ছদ্মবেশী নয়। পুরোদস্তুর পাখি। আকারে বিশাল, শক্তিশালী, হিংস্র এক পাখি। হার্পি ঈগল। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, ব্রাজিলের বৃষ্টিঅরণ্যে এদের একচেটিয়া রাজত্ব। পাপুয়া নিউগিনিতে হার্পিদের দেখা মেলে। তবে আমেরিকান হার্পি আর পাপুয়ান হার্পিদের মধ্যে আকারে ও বৈশিষ্ট্যে কিছু পার্থক্য আছে। এখন এই হার্পি ঈগল নিয়ে হঠাৎ এত আলোচনা কেন?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এই হার্পিদেরই চর্চা। ফেসবুক, রেডিটের কিছু ছবি বিভ্রান্তি তৈরি করেছে নেটিজেনদের মধ্যে। হার্পি ঈগলের ছবি দেখে অনেকেই ভেবেছেন সেগুলি পাখি নয়, পাখির বেশে কোনও মানুষ। আকারে এতটাই বড় আর অন্যান্য সাধারণ ঈগলদের থেকে শারীরিক বৈশিষ্ট্যে এতটাই ব্যতিক্রমী যে অনেক নেটিজেনই তাজ্জব হয়ে বলেছেন, “সত্যিকারের পাখি! ভাবতেই অবাক লাগছে। মনে হচ্ছে পাখি সেজে কোনও মানুষ পোজ দিচ্ছে।”
আরও পড়ুন: লাখ লাখ পবিত্র পাখির মমি: প্রাচীন মিশরের আর এক রহস্যভেদ
একটা সময় এই বিশাল ঈগলরা শুধুমাত্র গল্পকথাতেই ছিল। ১৭৫৮ সালে সুইডিশ জীববিজ্ঞানী কার্ল লিনেয়াস তাঁর বই ‘সিস্টেমা নেচার’-এ প্রথম এই হার্পিদের অস্তিত্বের কথা বলেন। এই পাখির নাম দেন ‘ভালচার হার্পিজা’। হার্পিয়া গণের এই ঈগলরা হিংস্র প্রকৃতির, শিকার ধরায় অত্যন্ত দক্ষ। ক্রেস্টেড ঈগল (Morphnus guianensis)ও নিউ গিনি হার্পি ঈগলদের (Harpyopsis novaeguineae)সঙ্গে এদের মিল থাকলেও স্বভাবে এরা আরও বেশি ক্ষিপ্র এবং শক্তিশালী।
এই হার্পি ঈগলদের মধ্যে স্ত্রী হার্পিরা আকারে একটু বেশি বড় হয়। ওজন সবচেয়ে বেশি ১২ কিলোগ্রাম। এর চেয়ে বেশি ওজনের স্ত্রী হার্পিও দেখা গেছে, তবে সেটা বিরল। পুরুষ হার্পিরা তুলনায় ছোট, ওজন ১-৫ কিলোগ্রামের মতো। দৈর্ঘ্যে এরা ৩ ফুটের বেশি। ডানা ছড়ালে সেই বিস্তার হয় প্রায় ৫-৭ ফুট। বসে থাকলে প্রায় মানুষের মাথার সমান উচ্চতা। জীববিজ্ঞানীরা বলেন, হার্পি ঈগলের বাসা নাকি দূর থেকেও দেখা যায়। প্রায় ১.২ মিটার জায়গা জুড়ে বাসা বানায় তারা।
I thought this was fake… Harpy Eagle incredible bird!! How have I never seen this before!? pic.twitter.com/1JZoBRCazC
— Marisa (@Eaco_M) September 30, 2019
হার্পি ঈগলের শিকার দক্ষতার কথা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন জীববিজ্ঞানীরা। নিজের ওজনের চেয়েও বেশি ওজন তুলে নিয়ে যেতে পারে তারা। গাছের মাথা থেকে পেল্লায় বাঁদর বা হনুমান ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে পারে অবলীলায়। তা ছাড়া, শ্লথ, হরিণ, পাখি এবং অন্যান্য ছোটখাটো প্রাণী, সাপ তো রয়েছেই। ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত বৃষ্টিঅরণ্যে হার্পি ঈগলদের নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন আমেরিকার একদল জীববিজ্ঞানী। আমাজন, ব্রাজিলের নানা জায়গায় ঘুরে হার্পিদের বসবাসের জায়গা ও তাদের শিকার ধরার কৌশল খুঁটিয়ে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রে তাঁরা জানিয়েছেন, পায়ের ধারালো নখে শিকারকে বিঁধে নিয়ে বহুক্ষণ আকাশে উড়তে পারে হার্পিরা। নখ ও বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে-খুবলে খায় শিকার। স্ত্রী হার্পিদের হিংস্রতা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি। এই হার্পিদের নিশানায় থাকে ম্যাকাও পাখিরাও।
মেক্সিকোর বৃষ্টিঅরণ্য থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে হার্পিরা। ব্রাজিল ও আটলান্টিকের বৃষ্টিঅরণ্যে যে ক’টা হার্পি টিকে রয়েছে তাও হাতে গোনা। ১৯৯০ সালে ব্রাজিলের এক সাংবাদিক জানিয়েছিলেন, হার্পিদের সংখ্যা কমতে বসেছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ চোরাশিকার। ২০০৯ সালে ফের একই তথ্য সামনে আসে। আইইউসিএন জানায়, বিলুপ্তির খাতায় ক্রমশ নাম লিখিয়ে ফেলছে হার্পিরা। এই হার্পিরা আবার পানামার জাতীয় পাখিও। ২০০৯ সালে ইউনাইটেড নেশনস ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সের সময় বেলিজের রিও ব্রাভো সংরক্ষণ কেন্দ্রে একটি হার্পিকে ঠাঁই দেওয়া হয়। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাবের প্রতিনিধি করা হয়েছিল সেই হার্পিকে।