
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনাভাইরাসকে এখনই থামানো যাবে কি? এ প্রশ্ন সকলেরই মনে। ভ্যাকসিন চলে এলেও ভাইরাসকে একেবারে নির্মূল করা সম্ভব কিনা সে নিয়ে বিজ্ঞানীরাও ধন্দে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের খাস স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবেক মূর্তি বলেছেন, করোনাভাইরাস যেভাবে ক্রমাগত জিনের গঠন বিন্যাস পাল্টে ফেলছে, তাতে এখনই ভাইরাল স্ট্রেনের সংক্রমণ থামানো সম্ভব নয়। বরং বারে বারেই রূপ বদলে ফিরে আসতে পারে ভাইরাস। ভাইরাল স্ট্রেনের জিনোম সিকুয়েন্স তথা জিনের বিন্যাস বের করলেই এই কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়।
৪৩ বছরের বিবেক মূর্তি এখন বাইডেন প্রশাসনের সার্জন জেনারেল। কোভিড টাস্ক ফোর্সেরও প্রধান তিনি। আমেরিকায় করোনা মহামারী মোকাবিলায় যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও বিবেকের ওপরেই দিয়েছেন বাইডেন। বিবেক বলেছেন, ভাইরাস ক্রমাগত তার চরিত্র বদলে ফেলছে। তার প্রমাণই হল এই ব্রিটেন স্ট্রেন তথা করোনার সুপার স্প্রেডার জিন বি.১.১.৭। জিনের গঠন বিন্যাস বদলে কখনও ব্রিটেন স্ট্রেন, কখনও দক্ষিণ আফ্রিকার মিউট্যান্ট স্ট্রেন, কখনও ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়ান্ট পি.১ হয়ে ফিরে আসছে করোনাভাইরাস। এত দ্রুত এই বদল হচ্ছে যে ভাইরাসের মিউটেশন ঠিক কোথা দিয়ে শুরু হচ্ছে সেটাই ধরা যাচ্ছে না।
বিবেক মূর্তি বলছেন, একটা ভাইরাসের জিনোম (ভাইরাল জিন) থেকে তৈরি হচ্ছে আর একটা, তার থেকে আবার আরও একটা। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকছে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হল, প্রতিটা জিনোমই একে অপরের থেকে আলাদা। কারণ প্রতিবারই প্রতিলিপি বা নিজের মতোই আরও একটিকে তৈরি করার সময় জিনের গঠন বদলে ফেলেছে ভাইরাস। প্রতিটা বদলেই সে হয়ে উঠেছে আরও সংক্রামক। বদলে যাওয়া ভাইরাল জিনোমগুলি যদি পরপর বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে তার তল খুঁজে পাওয়া যাবে না। একেবারে শুরুতে সে কেমন ছিল, তখন তার মতিগতিও বা কেমন ছিল, কিছুই বোঝা যাবে না।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজের ডিরেক্টর ও হোয়াইট হাউসের মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অ্যান্থনি ফৌজিও বলেছিলেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাস এমনভাবে তার স্পাইক প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড বদলে দিচ্ছে যাতে তার বিভাজন (Replication) আর দ্রুতগতিতে হয়। আর বিভাজনের ফলে তৈরি নতুন স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রামক হয়ে ওঠে এবং অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জিনের একটা রিডিং ফ্রেম থাকে, তাতে তিনটে বেস থাকে। প্রতি বেসে একটি করে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড থাকে। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড গুলো বদলে দিচ্ছে ভাইরাস। এতে তার লাভ হল, কোড বদলে গেলে সে আবার নতুন করে জিনের গঠন সাজিয়ে নিতে পারব। তার চেহারাও বদলে যাবে। হিউম্যান ট্রান্সমিশন বা এক মানুষের শরীর থেকে অন্য মানুষের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে হলে এই বদলটা দরকার। ব্রিটেন স্ট্রেনেও ঠিক এমনটাই দেখা গিয়েছে, অ্যামাইনো অ্যাসিডের দুটি কোডই মুছে দিয়েছে ভাইরাস। যার ফলে সে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে।
