
২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-মুক্ত হবে চিন, কমবে দূষণ, বড় দাবি জিনপিংয়ের
পূর্ব এশিয়ার গ্রিনপিসের ক্লাইমেট পলিসি অফিসার লি শুও বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় চিন এক বলিষ্ঠ ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ করছে। চিনা প্রেসিডেন্টের বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট। জলবায়ু সঙ্কট রুখতে আগামী দিনে চিনের আরও বড় লক্ষ্য আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বায়ুদূষণের নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে চিন। সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য চিনের স্থান পয়লা নম্বরে। আমেরিকা যদি ঐতিহসিকভাবে বৃহত্তম দূষণকারী দেশ হয়, তাহলে চিন হল দূষণের রাজধানী। সেই চিনই এখন দাবি করেছে ২০৬০ সালের মধ্যেই বায়ুদূষণের মাত্রা একেবারে কমিয়ে ফেলবে তারা। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বক্তব্য, দেশকে কার্বন-মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কীভাবে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে ফেলা যায় তার জন্য নতুন স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হয়েছে।
পূর্ব এশিয়ার গ্রিনপিসের ক্লাইমেট পলিসি অফিসার লি শুও বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় চিন এক বলিষ্ঠ ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ করছে। চিনা প্রেসিডেন্টের বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট। জলবায়ু সঙ্কট রুখতে আগামী দিনে চিনের আরও বড় লক্ষ্য আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে উঠেছিল চিন। এখনও বিশ্বে প্রায় ২৮ শতাংশ গ্রিন হাউস নির্গমনের জন্য দায়ী এই দেশই। অথচ চিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০৩০ সালের পর থেকে দূষণের মাত্রা কমবে। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মাফিক, পৃথিবীর তাপমাত্রাকে যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাঁধতে হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দূষণের মাত্রা ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে মার্কিন মুলুকে মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ টনের কাছাকাছি, চিনও তার কাছাকাছিই থাকবে।
জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে এখন একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও চিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় কোনও দায়িত্বই নেই চিনের। দূষণ কমানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তাদের। চিনের এখন একটাই কাজ যে কোনও প্রকারে আমেরিকার উপর দোষ চাপানো। অন্যদিকে, চিন বলছে, আমেরিকার উচিত জলবায়ু চুক্তি নিয়ে আরও দায়িত্বশীল হওয়া।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্যারিসে ১৯৫টি দেশ ১৩ দিন ধরে আলোচনা করে একটি খসড়া তৈরি করে। খসড়ার মূল কথা ছিল, চলতি শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেন প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কোনও ভাবেই না বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করা। লক্ষ্য থাকবে এই উষ্ণায়নকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা। উষ্ণায়ন থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে এটাই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক খসড়া, যাতে সায় দিয়েছিল আমেরিকা, ভারত, চিন-সহ জি-৭৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিও। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। যার প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে। মেরু অঞ্চলে দ্রুত হারে গলছে হিমবাহ স্তর। সমুদ্রপৃষ্ঠে জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ই চুক্তির মূল লক্ষ্যই ছিল বিশ্বের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এই চুক্তি সার্বিকভাবে মেনে চলেনি অনেক দেশই। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণকারী দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্যারিস চুক্তি থেকে তাঁদের দেশকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন কখনও স্রেফ ধোঁকা, কখনও বিজ্ঞানীর ছদ্মবেশে থাকা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্র বলে। স্পষ্ট বলেছিলেন যে ওবামার জলবায়ু সংক্রান্ত নীতি পাল্টে দেবেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আমেরিকার অংশগ্রহণ বাতিল করবেন ও উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে একটি ডলারও দেবেন না। অন্যদিকে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি চিনও। রাষ্ট্রসংঘ নিয়োজিত ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ছিল শুধুই বিপদের আগাম পূর্বাভাস। এবার সরাসরি তার ফল ভুগতে শুরু করেছে মানবজাতি।