
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনার টিকাকরণ চলছে দেশে। সপ্তাহে অন্তত চারদিন টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এখন স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকার অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এরপর ধাপে ধাপে সাধারণ মানুষজনের পালা। বেসরকারি হাসপাতালগুলিও টিকার ইঞ্জেকশন দিতে শুরু করবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। সেখান থেকেও টিকা নিতে পারবেন সাধারণ মানুষজন। এখনও অবধি যাঁরা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই ক্লান্তি, হাতে ব্যথা, ঝিমুনি বা হাল্কা মাথাব্যথার কথা বলেছেন। এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে সাধারণই বলা হচ্ছে। তবুও প্রশ্ন জেগেছে, কেন টিকা নেওয়ার পরে এমন ক্লান্তি বা ঝিমুনি আসছে? কোনও ভয়ের কারণ আছে কি? কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় হাতের যেখানে সূঁচ ফোটানো হচ্ছে সেখানে ব্যথা হচ্ছে অনেকেরই। সূঁচ ফোটানোর জায়গা ফুলে যাচ্ছে, লালও হয়ে যাচ্ছে অনেকের। তবে এতে তেমন ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যদি ইঞ্জেকশন নেওয়ার জায়গায় ক্রমাগত চুলকানি, র্যাশ হতে হতে থাকে বা অ্যালার্জির কোনও উপসর্গ দেখা দেয়, তখন সতর্ক হতে হবে। যদি কারও আগে থেকেই অ্যালার্জির ধাত থাকে তাহলে টিকা বুঝেশুনেই নেওয়া উচিত। যেমন ভারত বায়োটেক তাদের গাইডলাইনে বলে দিয়েছে, অ্যালার্জি বা পরিবারে অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলে কোভ্যাক্সিন টিকা নেওয়া যাবে না। যদি টিকা নিতেই হয়, তাহলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই। ফাইজারের টিকাতেও অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা গিয়েছে। তাই সেদিক থেকে সাবধান থাকতেই হবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নটা হল, টিকার ডোজ নেওয়ার পরে ক্লান্তি এবং ঝিমুনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন আসলে ভাইরাল স্ট্রেন থেকেই তৈরি। এই ভাইরাল স্ট্রেন নিষ্ক্রিয় হতে পারে যাকে বলে ইনঅ্যাকটিভ ভ্যাকসিন আবার অন্য কোনও ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করেও তৈরি হতে পারে, যেমন অক্সফোর্ডের টিকা তথা ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকা। ভ্যাকসিন নানা প্রযুক্তিতে তৈরি হয়, কিন্তু মূল আধারটা সেই ভাইরাল স্ট্রেন। তাই যখন বাইরে থেকে কোনও প্যাথোজেন শরীরে ঢোকানো হয়, তখন একটা সাময়িক প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন হতে পারে। তার জেরেই এই ব্যথা, ক্লান্তি, ঝিমুনি ইত্যাদি হয়ে থাকে। শরীরকেও সেই রোগের প্রাথমিক ধাক্কাটা সহ্য করতেই হবে। যেহেতু সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা উপাদান শরীরে ঢোকানো হচ্ছে তাই শুরুতে হাল্কা একটা ঝটকা লাগতেই পারে। তবে তা সাময়িক।
গবেষকরা বলছেন, টিকার ডোজে সাময়িক প্রতিক্রিয়া হবেই। আর এটাই হল সঙ্কেত যে টিকা ঠিকঠাক কাজ করছে। ভাইরাসের নিষ্ক্রিয় স্ট্রেন কোষে ঢুকলে তার ছাপ পড়বেই, যতক্ষণ না কোষ রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে পারছে। টিকার কাজই হল অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করা। মানে শরীরের কোষকে রোগের সঙ্গে পরিচয় করানো। একটা প্রাথমিক ধাক্কা দেওয়া যাতে কোষ বুঝতে পারে কী ধরনের প্রতিরোধ তৈরি করা উচিত। ভাইরাসের ধরন ও তার রোগ ছড়াবার ক্ষমতার সঙ্গে পরিচিত হলেই সেই মতো ইমিউন রেসপন্স তৈরি হবে শরীরে। মেমরি বি সেল তৈরি হবে যা ভাইরাল স্ট্রেনকে আগাগোড়া চিনে রাখবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের রোগ শরীরে ঢুকলে আগে থেকেই তার প্রতিরোধে সুরক্ষা বাড়িয়ে রাখবে।
টিকার ডোজ নেওয়ার পরে ক্লান্তি লাগলে বা ঝিমুনি আসলে তাতে ভয়ের কিছু নেই। কিছুদিনের মধ্যেই তা শরীরে সয়ে যাবে। তবে চিন্তার কারণ হল, যদি এই ঝিমুনি ক্রমাগত হতেই থাকে। সেই সঙ্গে অন্য নানা উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন—মানসিক অবসাদ, ভুলে যাওয়া, শরীরে অধিক প্রদাহ বা অস্বস্তি ইত্যাদি। ফাইজারের টিকা নেওয়ার পরে এক স্বাস্থ্যকর্মী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, অনেকের আবার নানা শারীরিক সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। তবে অনেক সময়েই শরীরে ক্রনিক রোগ থাকলে তার একটা রিঅ্যাকশন দেখা যায়, টিকার ডোজের কারণে নাও হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনওরকম শারীরিক অস্বস্তি বা প্রদাহ শুরু হলে, সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাথাব্যথা, মাথা ধরা হামেশাই দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের। ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রেই টিকার ট্রায়ালে মাথাযন্ত্রণার উপসর্গ দেখা গেছে। সেই সঙ্গে হাল্কা জ্বর। গবেষকরা বলছেন, হাল্কা মাথাব্যথা নিয়ে চিন্তা নেই। যদি তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় এবং ক্রমাগত চলতেই থাকে, মাইগ্রেনের সিম্পটম্প দেখা দেয় তখনই চিন্তা বাড়তে পারে।
পেশির ব্যথা, সূঁচ ফোটানোর জায়গায় র্যাশ, অ্যালার্জি দেখা গেছে টিকার ডোজে। অ্যাস্ট্রজেনেকা, মোডার্নার টিকার ডোজে বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবকেরই এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে। তবে এগুলো সাময়িক। তীব্র অ্যালার্জি দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।