
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সন্ত্রাসবাদীদের শায়েস্তা করতে নাকি বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনে গলা চড়িয়ে এমনটাই বলেছিল পাকিস্তান। আদতে দেখা গেল ঠিক উল্টোটাই। পাক মসজিদে জড়ো হয়ে জঙ্গিদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করছে লস্কর-ই-তৈবা, জামাত-উদ-দাওয়ার মতো জঙ্গি সংগঠন। তাদের উদ্যোগ, আয়োজনও বিশাল।
সূত্রের খবর, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শাহিওয়াল শহরের একটি মসজিদে আজ সকাল থেকেই প্রার্থনার জন্য জড়ো হয়েছে লস্কর-জামাত। প্রার্থনা শেষে তাদের বিশেষ সভাও আছে। ফের নতুন কোনও নাশকতার ছক কষা হবে। এই সভার জন্য টাকা চাওয়া হয়েছিল ৭০ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর জন্য অর্থ অনুদান দিতে বলা হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। গুজরানওয়ালা থেকে এই ৭০ জনকে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে।
২৬/১১ মুম্বই হামলায় ভারতীয় বাহিনীর হাতে খতম হয়েছিল যে জঙ্গিরা তাদের জন্যই এই বিশেষ প্রার্থনা। আজ থেকে ঠিক ১২ বছর আগে বিষাক্ত ছোবলে রক্তাক্ত হয়েছিল ভারত। চার দিন ধরে মুম্বই শহর জুড়ে দশ জঙ্গির সেই হামলা বদলে দিয়েছিল সুরক্ষা ও নিরাপত্তার সামগ্রিক ধারণা। সন্ত্রাসের বলি হয়েছিলেন ১৭০ জন নিরাপরাধ মানুষ। আহত তিনশোরও বেশি।পাকিস্তান থেকে আরব সাগর পেরিয়ে মুম্বইতে হাজির হয়েছিল দশ জঙ্গি। কেউ কিছু বোঝার আগেই তারা ছড়িয়ে পড়েছিল মুম্বইয়ের লিওপোল্ড কাফে, নরিম্যান হাইস, তাজ হোটেল, ছত্রপতি শিবাজী বাস টার্মিনাস, ট্রাইডেন্ট হোটেল, কামা হাসপাতাল-সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। তার পরই শুরু হয়েছিল নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। তাজ হোটেলকে জঙ্গিমুক্ত করতে ২৯ নভেম্বর ‘অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো’ অভিযান চালান ভারতীয় এনএসজি কম্যান্ডোরা। আজমল কাসভ ছাড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল ৯ জঙ্গি। কাসভের ফাঁসি হয়েছিল ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল, পাকিস্তান থেকে এই সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র করেছিল জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা। প্রচ্ছন্ন মতদ ছিল জামাত-উদ-দাওয়ার। মুম্বই হামলার এই দুই সংগঠনেরই মাথা হাফিজ সইদ। গত বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি পাকিস্তানে গ্রেফতার করা হয় হাফিজ সইদকে। সন্ত্রাসবাদের প্রচার, জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অর্থ সাহায্য ইত্যাদি নানা অভিযোগে হাফিজের বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করে গুজরানওয়ালা আদালত। পাকিস্তানের অ্যান্টি টেররিজম অ্যাক্টের (এটএ ১৯৯৭) ১১ ধারায় হাফিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। গুজরানওয়ালা, মুলতান, লাহোরে হাফিজ পরিচালিত একাধিক বেনামী সংগঠন ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু ভারতের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এইসব গ্রেফতারি শুধুই লোকদেখানো। আসলে পাকিস্তানে বহাল তবিয়তেই রয়েছে হাফিজ সইদ। এত মাসেও হাফিজকে সাজা শোনানোর ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখায়নি পাকিস্তান।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরেই লস্করের চিফ অপারেশনাল কম্যান্ডার জাকিউর রহমান লকভির সঙ্গে যোগাযোগ হয় হাফিজ সইদের। সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের জন্য ফান্ড জড়ো করার চেষ্টা করছে লস্কর। গত ফেব্রুয়ারিতে লাহোরের জামিয়া মসজিদেও সভা করেছিল সইদ। নিরপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা মসজিদ চত্বর। ভারতে ফের ২৬/১১ –র কায়দায় বড়সড় হামলা চালানোর ছক কষা হচ্ছএ পাকিস্তানে। তার আগে উপত্যকায় নানাভাবে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে পাক জঙ্গিরা। কিছুদিন আগেই নাগরোটা টোল প্লাজার কাছে চার জঙ্গিকে নিকেশ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই চার জঙ্গিকেও পাকিস্তান থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছিলএত মাসেও হাফিজকে সাজা শোনানোর ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখায়নি পাকিস্তান। মাটির নিচের গভীর সুড়ঙ্গ দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের গ্রামে উঠেছিল জঙ্গিরা। সঙ্গে ছিল বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। তবে উপত্যকার জঙ্গি ঘাঁটিতে সেই অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার আগেই তাদের খতম করে সেনাবাহিনী।