
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মশার বংশ ধ্বংস করার অস্ত্র পেয়ে গেছেন বিজ্ঞানীরা।
ওষুধ, ইঞ্জেকশন, কীটনাশক কোনও কিছুতেই ম্যালেরিয়া মশাদের দমানো যাচ্ছে না। বছর বছর যেন শক্তি বাড়িয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসছে মশারা। কখনও রোগের প্রকোপ কমছে, আবার কখনও লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একেই ডেঙ্গি মশাদের উৎপাতে নাস্তানাবুদ মানুষজন, তায় গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আছে ম্যালেরিয়া। ভারত শুধু নয়, আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকাতেও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুবই বেশি।
এই ম্যালেরিয়া মশাদের রোখা যায় কীভাবে? সে নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। বাড়িঘরে, অলিতে গলিতে, বাজারে-দোকানে রাশি রাশি কীটনাশক স্প্রে করেও লাভ হচ্ছে না। মশারা যেন কীটনাশকের বিষ গেলারও ক্ষমতা পেয়ে গেছে। আসলে হয়েছে ঠিক তেমনটাই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিনের ভেল্কিতে কীটনাশকের কোনও প্রভাবই পড়ছে না মশাদের ওপর। তারা রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এমন চলতে থাকলে বিপদ আরও বাড়বে। মশার সর্বণাশ করা তো যাবেই না বরং কড়া কড়া ওষুধ খেলেও আর অসুখ সারানো যাবে না।
![]()
৩০০০ জিনের মধ্যে মিউট্যান্ট ২৯ জিনের খোঁজ
মশার শরীরে এমন কী কী জিন আছে যাদের কারণে বাহুবলীর মতো বলিয়ান হয়ে যাচ্ছে অ্যানোফিলিস মশারা? ভারতে অ্যানোফিলিস স্টিফেনসি মশাদেরই বেশি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কয়েক বছর ধরে অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশাদের জিনের সিকুয়েন্স বা বিন্যাস বের করার চেষ্টা করছিলেন গবেষকরা। দেশ ও বিদেশের নামী দামি ইউনিভার্সিটি, রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাই রয়েছেন এই গবেষণায়। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, বেঙ্গালুরুর ইনস্টিটিউট অব বায়োইনফরমেটিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড বায়োটেকনোলজি, টাটা ইনস্টিটিউট ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটির গবেষকরা মিলে অ্যানোফিলিস মশার প্রায় তিন হাজার জিনের গঠন বিন্যাস বের করে ফেলেছেন।
টাটা ইনস্টিটিউটের গবেষক সুরেশ সুব্রহ্মাণী বলেছেন, এই হাজার তিনেক জিনোমের মধ্যে ২৯টি জিন এমন আছে যা মিউট্যান্ট হযে গেছে। সহজ করে বললে, এই জিনগুলির গঠন বিন্যাস বদলে গিয়ে আরও সংক্রামক হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন মশার নতুন সুপার-জিন, যে কোনও কীটনাশকের প্রভাব ঠেকাতে পারবে। স্ত্রী মশার শরীর থেকে এই জিন লার্ভার মধ্যেও সঞ্চারিত হচ্ছে। সে কারণেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষা বলেছিল, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ার মারণ থাবায়। এর উপযোগী কোনও টিকা এখনও সে ভাবে বাজারে আসেনি। কোনও ওষুধও বেশি দিন তার সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি, কারণ, কিছু দিন সেই ওষুধ ব্যবহারের পর, পরজীবীরা তার কার্যকরী ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করতে শিখে যায়, এর কারণই হল ওইসব মিউট্যান্ট জিন।
‘বিএমসি বায়োলজি’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর সামনে এনেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, এই সুপার-জিনগুলি হবে অ্যানোফিলিস মশার যম। ক্রিসপার জিন এডিটিং পদ্ধতিতে ইতিমধ্যেই এই জিনগুলিকে কাটাছেঁড়া করে দেখে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোন পথে জিনের মিউটেশন বা বদল আটকে দিলে মশা আর রোগ ছড়াতে পারবে না, সে উপায় বের করা হচ্ছে। এই জিনের কারসাজিতেই মশারা যে কোনও পরিবেশে বেঁচে থাকার কৌশল আয়ত্ত করে ফেলছে। সে রাস্তাটাও বন্ধ করে দেবেন গবেষকরা।