
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে কাতর আর্জি জানাচ্ছেন এক প্রৌঢ়। আশপাশ থেকে নাগাড়ে উড়ে আসছে কিল, চড়, ঘুঁষি। প্রৌঢ়ের সারা গায়ে মাটি মাখা, হাত-পা কেটে রক্ত ঝড়ছে। মারের চোটে চোখ-মুখ ফোলা। অভিযোগ নিজের দোকানে বসে গোমাংস বিক্রি করছিলেন তিনি। প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার মাঝে গণপিটুনির এমন ভিডিও ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
ঘটনা রবিবারের। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম সওকত আলি। বয়স ৬৮ বছর। মধুপুর এলাকার বাজারে সওকতের মাংসের দোকান রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, বহুবার আপত্তি সত্ত্বেও নিজের দোকানে গোমাংস বিক্রি করতেন তিনি। এই প্রসঙ্গে এলাকার যুবকদের সঙ্গে প্রায়ই তাঁর বাগবিতণ্ডা লেগে থাকত।
গত রবিবার ১০-১২ জন যুবক তাঁর দোকানে চড়াও হয়। প্রথমে দোকান বন্ধ করার হুমকি, রাজি না হলে প্রৌঢ়কে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। সেখানেই শুরু হয় বেধড়ক মার। সওকতের ভাই সাহাবুদ্দিনের অভিযোগ, নৃশংসভাবে তাঁর দাদাকে মেরে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছিল। তাঁর কাতর আবেদনে কর্ণপাত করছিল না উত্তেজিত জনতা। এমনকি তাঁকে বারংবার প্রশ্ন করা হচ্ছিল, তিনি বাংলাদেশি কি না, এনআরসি-তে তাঁর নাম রয়েছে কি না, ইত্যাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সওকতের চিকিৎসা চলছে এলাকারই একটি সরকারি হাসপাতালে।
সাহাবুদ্দিনের দাবি, শুধু মারধরেই ক্ষান্ত হয়নি এলাকার যুবকরা, তাঁর দাদাকে নিষিদ্ধ খাবার খেতেও বাধ্য করা হয়। বাজারে গোমাংস বিক্রির অনুমতি দেওয়ায় সেখানকার মালিক কমল থাপাকেও মারধর করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় রবিবার থেকে হিংসা ছড়িয়েছে এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাইরাল ভিডিওটি মুছে দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। তবে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক নয় বলেই দাবি করেছেন এসপি রাকেশ রৌশন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষকেই সতর্ক করা হয়েছে। গণপিটুনিতে অভিযুক্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বাড়িতে গোমাংস রাখার ‘শাস্তি’ দিতে ২০১৫ সালে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল দাদরির মহম্মদ আকলাখকে। যে আখলাক হত্যা নিয়ে দেশ জুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। গ্রামের বাইরে জঙ্গলের ধারে গোমাংস ছড়িয়ে রয়েছে— এমনই এক খবরে দাবানলের মতো হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল বুলন্দশহরে। প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিকও।