
শীতের আগে ভারতে ঢুকবে বলে ওত পেতেছে ২৫০-৩০০ জঙ্গি, সতর্ক করলেন সেনা কম্যান্ডার
গত বছর প্রায় ১৩০ জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে উপত্যকায় ঢুকে পড়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যা ৩০ জনের কাছাকাছি। ৭০ শতাংশেরও বেশি জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল অমরদীপ।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাক জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ এ বছর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় কড়া পাহারা দিচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীরা। সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভেঙে রোজ সীমান্তে গোলা-গুলি চালালেও পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা বারে বারেই বানচাল করে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। তবে শীতের আগে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে উপত্যকায় ঢুকে পড়ার বড়সড় চেষ্টা চালাতে পারে জঙ্গিরা। কম করেও ২৫০ থেকে ৩০০ জঙ্গি সীমান্তের কাছে ওত পেতে আছে, এমনটাই জানিয়েছেন ভারতীয় সেনার বজ্র ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং (জিওসি) অমরদীপ সিং আউজলা।
গত বছর প্রায় ১৩০ জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে উপত্যকায় ঢুকে পড়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যা ৩০ জনের কাছাকাছি। ৭০ শতাংশেরও বেশি জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল অমরদীপ। জঙ্গিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালালে যোগ্য জবাব দেবে ভারতীয় বাহিনী। সীমান্তে দিন-রাত কড়া পাহারা দিচ্ছে জওয়ানরা, বলেছেন জিওসি অমরদীপ।
ভারতীয় সেনার ১৫ নম্বর কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিএস রাজু বলেছেন, শীতের আগেই ভারতে ঢোকার মরিয়া চেষ্টা চালাবে জঙ্গিরা। নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে তিনশোরও বেশি জঙ্গি। তাদের সীমান্ত পার হওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রায় প্রতিদিনই নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চালিয়ে যাচ্ছে পাক সেনারা। ড্রোনে চাপিয়ে অস্ত্রশস্ত্র উপত্যকায় চালান করার চেষ্টাও চলছে। গত শনিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় গুলির লড়াই হয় জঙ্গিদের। কুলগামের চিনগাম এলাকায় সেনার গুলিতে নিকেশ হয় দুই জঙ্গি। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, কুলগাম, কুপওয়ারায় নতুন করে নাশকতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। রাজৌরি-পুঞ্চ এবং কুপওয়ার-কেরান সেক্টরে দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি ঢোকানোর ছক কষছে লস্কর এবং জইশের মাথারা। এর পিছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাত রয়েছে। চিনের সঙ্গেও গোপন আঁতাত রয়েছে আইএসআইয়ের। ভারতকে দু’দিক থেকে চাপে রাখতে নয়া ছক কষছে চিন। জম্মু-কাশ্মীরে নাশকতা বাড়ানোর জন্য পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করছে বলে খবর। কাশ্মীরে অশান্তি জিইয়ে রাখার জন্য জঙ্গি সংগঠন আল বদরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি।
কিছুদিন আগেই উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। জওয়ানরা জানান, তিন-চারজন লোক দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি টিউব কিষেনগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই টিউবের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় ৪টি একে-৪৭ রাইফেল, ৮টি ম্যাগাজিন ও ২৪০টি কার্তুজ।
জিওসি বিএস রাজু বলেছেন, পাকিস্তানকে সংঘর্ষবিরতি বন্ধ করার জন্য বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুধরাবে না কখনও। জানুয়ারি থেকে অগস্টের মধ্যে অন্তত ২৪২ বার গোলাগুলি চলেছে নিয়ন্ত্রণরেখায়। পয়লা জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ১৮৬ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে সীমান্তে। সীমান্ত উত্তেজনায় শহিদ হয়েছেন আটজন ভারতীয় জওয়ান। পাক গোলায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বহু বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বহু মানুষের। সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি জিইয়ে রাখতে চাইছে পাকিস্তান।