
নিম-হলুদ-তুলসি করোনা রুখতে পারে, গবেষণায় দাবি লখনৌয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির
সম্প্রতি লখনৌয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, দেশীয় আয়ুর্বেদিক উপাদান যেমন নিম, হলুদ, তুলসি, গুলঞ্চ, অশ্বগন্ধা এবং এদের সংমিশ্রণ শুধু রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেই নয়, করোনাভাইরাসের শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতাকেও আটকে দিতে পারে।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নিম, হলুদ, তুলসিতে কি করোনা সারবে? অনেক জটিল রোগের চিকিৎসাতেই সাফল্য পেয়েছে ভারতীয় আয়ুর্বেদ। করোনা অতিমহামারী ঠেকাতে আয়ুর্বেদের ভূমিকা কতটা হতে পারে সেই নিয়ে জোরকজমে গবেষণা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রাধীন টাস্ক ফোর্স। করোনা প্রতিরোধী আয়ুর্বেদ গবেষণায় আয়ুষ মন্ত্রকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সরকারি সংস্থা কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চও (সিএসআইআর)।
সম্প্রতি লখনৌয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, দেশীয় আয়ুর্বেদিক উপাদান যেমন নিম, হলুদ, তুলসী, গুলঞ্চ, অশ্বগন্ধা এবং এদের সংমিশ্রণ শুধু রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেই নয়, করোনাভাইরাসের শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতাকেও আটকে দিতে পারে। এইসব ভেষজ উপাদানে রয়েছে এমন বায়োঅ্যাকটিভ কম্পাউন্ড যা ভাইরাল স্ট্রেনের মোকাবিলা করতে পারে।

করোনা সারাতে ভরসা হতে পারে ভারতীয় আয়ুর্বেদ, বলছেন গবেষকরা
কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে আয়ুর্বেদিক উপাদানের ভাইরাসনাশক ক্ষমতা রয়েছে। কী কী উপাদান এবং তাদের কী কী কম্বিনেশনে ওষুধ তৈরি হতে পারে সেই নিয়ে গবেষণা ও ট্রায়াল চলছে। এই গবেষণার রিপোর্ট ‘স্প্রিঙ্গার নেচার জার্নাল অব ভাইরাল ডিজিজ’ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন দৌড়ে এগিয়ে এল ফাইজার-বায়োএনটেক, প্রথম ট্রায়ালেই মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে দাবি
নিম, তুলসি, হলুদ-সহ ভেষজ উপাদানের কী কী কম্বিনেশনে ট্রায়াল চলছে তার বিস্তারিত তথ্য এখনও সামনে আনেননি গবেষকরা। বলা হয়েছে, আয়ুর্বেদিক উপাদান খুব ভাল ইমিউন বুস্টার হিসেবে কাজ করতে পারে, পাশাপাশি শরীরে ভেতরে ভাইরাল স্ট্রেনের বাড়বাড়ন্তকেও থামিয়ে দিতে পারে। যেমন অশ্বগন্ধার মূল, পাতা, গাছের ডাল, ছাল সবই ওষুধ তৈরিতে লাগে। অশ্বগন্ধার মূলের হাইড্র-অ্যালকোহলিক এক্সট্র্যাক্টের অ্যান্টি-ভাইরাল ক্ষমতা আছে। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি-কাশি, প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসাতেও লাগে। করোনা সংক্রমণে এই উপসর্গগুলোই বেশি দেখা দিচ্ছে। মুলেঠি বা যষ্টিমধুতে রয়েছে অনেক বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পাউন্ড ও গ্লাইসিরাইজিক অ্যাসিড। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, প্রদাহজনিত রোগ, খাদ্যনালীর সংক্রমণ কমাতে কাজে লাগে। নিম, তুলসীর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগনাশক হিসেবে কাজ করে। গুলঞ্চের অ্যান্টি-অকসিডেন্ট, অ্যান্টি-হাইপার গ্লাইসেমিক, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক, অ্যান্টি-নিওপ্লাস্টিক, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান টিউবারকিউলোসিস, প্রদাহজনিত রোগ এমনকি আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসাতেও কাজে লাগে। সংক্রমণজনিত নানা রোগের উপশম হয় গুলঞ্চ বা গুড়ুচি পিপলিতে।
করোনার চিকিৎসায় যে সমস্ত ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে তার বাইরে গিয়েও আয়ুর্বেদ, যোগ, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথির ট্রিটমেন্টের জন্য অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আয়ুষ মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিক বৈদ্য রাজেশ কোটেচা বলেছেন, আয়ুর্বেদ এবং হোমিওপ্যাথির র্যান্ডোমাইজ়ড ক্লিনিকাল ট্রায়াল (RCT) চলছে । প্রাথমিক ট্রায়ালের রিপোর্ট সন্তোষজনক। আরও বেশি সংখ্যক রোগীর উপর প্রয়োগ এবং পর্যবেক্ষণের পরেই সেই রিপোর্ট সামনে আনা হবে।