
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রার ভুলগুলো শুধরে যাবে তৃতীয় মিশনে। ল্যান্ডার বিক্রমের দুঃখ ঘোচাবে চন্দ্রযান-৩। পালকের মতো সফট ল্যান্ড করবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আঁধার পিঠে, কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ হবে না, এমনটাই বলেছেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন।
ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রা সফলতার শিখর না ছুঁলেও ব্যর্থ নয়। তবে তৃতীয় চন্দ্রযাত্রা মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে নজির তৈরি করবে বলেই দাবি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল থেকে গগনযান মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। একই সঙ্গে চন্দ্রযাত্রার প্রস্তুতিও নেবে ইসরো। গগনযানের আগেই চাঁদে নামবে ইসরোর চন্দ্রযান-৩।
চন্দ্রযান ৩-এর প্রযুক্তিতে কী কী বদল আনা হয়েছে সেই ব্যাপারে এখনও মুখ খোলেননি ইসরোর গবেষকরা। শিবন বলেছেন, আর অরবিটার নয়, এবার হয়তো ল্যান্ডার ও রোভার নিয়েই চাঁদে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান ৩। তৃতীয় চন্দ্রযাত্রার উদ্দেশ্যও হতে পারে চাঁদের আঁধার পিঠ অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুর রহস্যের খোঁজ। এই দক্ষিণ মেরুরই কোথাও হারিয়ে গেছে চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার বিক্রম। চন্দ্রযান ৩ চাঁদের সেই রহস্যময় পিঠেরই গোপন কথা সামনে আনবে।
চাঁদে দ্বিতীয় অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল ল্যান্ডিং বা অবতরণে ত্রুটির জন্য। তাই ল্যান্ডার পাঠিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণই এ বারের মূল লক্ষ্য। দ্বিতীয় অভিযানে ল্যান্ডার ও রোভারের নাম রাখা হয়েছিল বিক্রম ও প্রজ্ঞান। এ বারে ল্যান্ডার ও রোভারের নাম কী হবে, এখনও তা প্রকাশ করা হয়নি। সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই ঘোষণা করবেন।
চন্দ্রযান ৩ নিয়ে ইসরোর অন্দরে উত্তেজনা তুঙ্গে। আগের বার চাঁদের মাটিতে অবতরণের ক্ষেত্রে যে ভুল হয়েছিল সেটা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা হবে বলে ইসরো সূত্রে খবর। গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে সবরকম যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে থাকা অরবিটার রেডিও সিগন্যাল পাঠালেও তাতে ধরা দেয়নি ল্যান্ডার বিক্রম। অবতরণের প্রথম পর্যায় গতিবেগের ভারসাম্য বজায় ছিল, অর্থাৎ চন্দ্রপৃষ্ঠের ৩০ কিলোমিটার থেকে ৭.৪ কিলোমিটার দূরত্বে বিক্রমের গতিবেগ স্বাভাবিক ভাবেই ১,৬৮৩ মিটার/সেকেন্ড থেকে কমে যায় ১৪৬ মিটারে। সমস্যা তৈরি হয় দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়ে। চাঁদের মাটির খুব কাছাকাছি গিয়ে গতিবেগে গলদ হয়ে যায় বিক্রমের। যে নির্দিষ্ট মাত্রার বেগ তার সিস্টেমে আপডেট করা ছিল সেটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে বিক্রম। যে জায়গায় তার ল্যান্ড করার কথা ছিল তার থেকে অন্তত ৫০০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে। তৃতীয় চন্দ্রাভিযানে সেই ত্রুটি সামলে নেওয়া হবে।
বিক্রম ল্যান্ড করতে না পারলেও অরবিটার কিন্তু এখনও চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে কাজ করে যাচ্ছে। চাঁদের ১.৭ কিলোমিটার গভীর সারাভাই গহ্বরের থ্রি-ডি ছবি তুলে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠিয়েছে অরবিটার। গহ্বরের প্রতিটি খাঁজ স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে ছবিতে। ইসরো জানাচ্ছে, সারাভাই ক্রেটারের খোঁজ আগামী দিনে চন্দ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। চাঁদের পিঠের খানাখন্দ, গহ্বর, চাঁদের মাটির বৈশিষ্ট্য আরও বিশদে জানতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া, অরবিটারের ‘ডুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডার’ (DF-SAR)-এ ধরা পড়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠের অনেক অজানা ও রহস্যময় গহ্বরের ছবি।