দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত কয়েক দিন ধরেই উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ছিল গালওয়ান উপত্যকা বরাবর ছাউনি ও বাঙ্কার তৈরি করছে চিনা সেনা। গালওয়ান নদীর পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ছাউনি বানিয়ে ছিল তারা। মোতায়েন করেছিল অতিরিক্ত সেনা। কিন্তু সম্প্রতি সেই এলাকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে চিনা সেনা। কারণ গালওয়ান নদীতে জল বাড়ায় তার দু’পাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি।
সেনার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আকসাই চিন এলাকা থেকে সৃষ্টি হওয়া এই গালওয়ান নদীতে বরফগলা জলের পরিমাণ হঠাৎ করেই বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। কারণ ওই এলাকায় তাপমাত্রা বাড়ছে। ওই আধিকারিক বলেন, “খুব দ্রুত বরফ গলছে। তাই এই মুহূর্তে নদীর পাশের কোনও জায়গা সুরক্ষিত নয়।” তিনি আরও বলেন, উপগ্রহ চিত্র ও ড্রোন চিত্রে দেখা গিয়েছে, গালওয়ান নদীর পাশে তৈরি করা চিনা সেনার তাঁবু বন্যার জলে ধুয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চিনা সেনার সেখানে থাকা কোনও মতেই সম্ভব নয় বলে সেনা সূত্রে খবর। কারণ পাহাড়ি এলাকার নদীতে বন্যা হলে মুহূর্তের জলোচ্ছ্বাসে সবকিছু ধুয়ে-মুছে যেতে পারে। তাই এই মুহূর্তে পিছু হটতে হবে চিনের সেনাবাহিনীকে। এতদিন ধরে গালওয়ান উপত্যকায় যে কর্মকাণ্ড তারা করছিল, তার সবকিছুই বিফলে যাবে বলে ধারণা ভারতীয় সেনার।
লাদাখ থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে গত ৫ মে থেকে বৈঠক চলছে ভারত ও চিনের। প্রাথমিক এই বৈঠকে ওই এলাকা থেকে সেনা সরাতে রাজি হয়েছিল দু’দেশই। কিন্তু গত ১৫ জুন হঠাৎ করেই ভারতীয় সেনার উপর হামলা করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। এই হামলায় ভারতের ২০ জওয়ান শহিদ হন। ভারতীয় সেনার পাল্টা মারে চিনেরও অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়।
এই ঘটনার পরেও সেনার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসে। সেখানেও চিন স্বীকার করে এই সংঘর্ষের ঘটনা হওয়া উচিত ছিল না। যদিও মুখে একথা বললেও কাজে অন্য কিছু করতে থাকে তারা। উপগ্রহ চিত্রে বারবার ধরা পড়ে গালওয়ান উপত্যকা বরাবর সেনা বাড়াচ্ছে তারা। বুলডোজার দিয়ে পাথর ফেলে গালওয়ান নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে তার উপর কালভার্ট বানায় চিন। তারপর সেই কালভার্টের উপর দিয়ে ট্রাক পারাপার করায়। গালওয়ান নদীর তীরে বাঙ্কার তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন হয়।
এই পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি বাড়ায় ভারতীয় সেনাও। লাদাখের আকাশে সুখোই-৩০ এমকেআই ও মিগ-২৯ বিমানের মহড়া দেখা যাচ্ছে। এছাড়া মালবাহী বিমান আমেরিকার সি-১৭ ও সি-১৩০জে এবং রাশিয়ায় তৈরি ইউশিন-৭৬ ও আন্তোনভ-৩২ তৈরি রয়েছে। অ্যাটাক চপার অ্যাপাচে ও চিনুকও তৈরি রয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লেহ ও লাদাখে গিয়ে সেনার মনোবল বাড়িয়েছেন।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে ওই এলাকায় জলোচ্ছ্বাস বাড়ছে। বরফ গলা জলে গালওয়ান নদীর জলস্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই এত কিছু করার পরেও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে চিনা সেনা। প্রকৃতির মারে পিছু হটছে তারা।