
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘টুলকিট’ মামলায় দেশদ্রোহের অভিযোগে পরিবেশ আন্দোলনকারী দিশা রবির তিনদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। এই মামলায় দিশার পাশে দাঁড়ালেন সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ। গ্রেটার করা একটি টুইটকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল এই বিতর্ক। ফের একটি টুইট করেই ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রেটা।
২০১৮ সালের অগস্ট মাসে ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন গ্রেটা। সেই সংস্থার তরফে টুইট করে বলা হয়, “সবার যাতে ন্যায়বিচার হয়, তার জন্য শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক ভাবে নিজেদের আওয়াজ তুলুন।”
সেই টুইটের জবাবেই টুইট করে গ্রেটা বলেন, “বাক স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন মানবাধিকারের মধ্যেই পড়ে। যে কোনও গণতন্ত্রের মূল্যবান অংশ এগুলি। দিশা রবির পাশে আছি।” ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিশার সমর্থনে মুখ খুলেছেন অনেকে। ‘হ্যাশট্যাগ স্ট্যান্ড উইথ দিশা রবি’ এই মুহূর্তে ভাইরাল।
Freedom of speech and the right to peaceful protest and assembly are non-negotiable human rights. These must be a fundamental part of any democracy. #StandWithDishaRavi https://t.co/fhM4Cf1jf1
— Greta Thunberg (@GretaThunberg) February 19, 2021
দিল্লি হাইকোর্ট দিশা রবির জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেও বম্বে হাইকোর্ট অন্য দুই সমাজকর্মী নিকিতা জ্যাকব ও শান্তনু মুলুকের গ্রেফতারি পরোয়ানা পিছিয়ে দিয়েছে বলে খবর। টুলকিটে বিতর্কে দিশার সঙ্গে এই দুজনেরও নাম জড়িয়েছিল। সূত্রের খবর, ২৫ হাজার টাকা বন্ডে সমাজকর্মী ও আইনজীবী নিকিতাকে শর্তসাপেক্ষ জামিন দিয়েছে আদালত।
কৃষক আন্দোলনের সপক্ষে গ্রেটা থুনবার্গকে ‘টুলকিট’ শেয়ার করার অভিযোগে দিশা রবিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, বিশ্বজুড়ে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানানো হয়েছিল ওই টুলকিটের মাধ্যমেই। এর পরেই বেঙ্গালুরু থেকে ২১ বছরের সমাজকর্মী দিশাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধদমন শাখা। তদন্তকারীদের দাবি ছিল, ভারতে ওই টুলকিটের পরিচালনা করছিলেন দিশা। নেট মাধ্যমে ওই টুলকিটের মাধ্যমেই কৃষক আন্দোলনের প্রচার চালাচ্ছিলেন।
দিশার পরেই নাম জড়ায় আইনজীবী তথা সমাজকর্মী নিকিতা জ্যাকবের। দিশার সঙ্গেই টুলকিটে কৃষক আন্দোলনের প্রচার করছিলেন নিকিতা, এমন অভিযোগ আনে দিল্লি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা আনা হয়। টুলকিট শেয়ার করার ‘অপরাধে’এফআইআর দায়ের করা হয় আরও এক সমাজকর্মী শান্তনু মুলুকের বিরুদ্ধেও। পুলিশ জানাচ্ছে, এই তিনজনই একসঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন জুম কলে তাঁদের কথা হয়েছিল। নিজেদের মধ্যে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বলেও দাবি পুলিশের। পুলিশের আরও অভিযোগ, ওই টুলকিট তৈরির পিছনে খালিস্তানি আন্দোলনের সমর্থনকারীদের হাত রয়েছে। আর এই টুলকিট সম্পাদনা করে খালিস্তানপন্থীদের সমর্থন করেছেন দিশা ও বাকি অভিযুক্তরা। পুলিশের দাবি, দিশা, নিকিতা ও শান্তনুদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।
এরপরেই দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেন দিশা। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপের ব্যক্তিগত চ্যাট ও তদন্তের সব গোপন তথ্যই সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিচ্ছে পুলিশ। গতকাল রায়ে দিল্লি পুলিশকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করে হাইটোর্কের বিচারপতিরা জানান, তদন্তে পাওয়া কোনও তথ্য যেন বাইরে ফাঁস না হয়। তদন্তের প্রক্রিয়ায় কোনওভাবে বিঘ্ন না ঘটে। সেই সঙ্গে বিচারপতিরা এও বলেন, এমন তথ্য ফাঁস করা উচিত নয়, যা ব্যক্তির অধিকারকে খর্ব করে। সংবাদমাধ্যমগুলিকেও সংযত থাকার নির্দেশ দেয় দিল্লি হাইকোর্ট।
শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমের একাংশ বা দিল্লি পুলিশই নয়, আবেদনকারী দিশা রবিকেও কড়া বার্তা দিয়েছে আদালত। দিশাকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, তিনি যেন এমন কোনও কাজ না করেন যাতে পুলিশ বা সরকারি কর্তৃপক্ষের সম্মানহানি হয়।