
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশ যদি হঠাৎ বলে ইলিশ পাঠানো বন্ধ, কেমন হবে? দার্জিলিঙে গণ্ডগোলের জন্য যদি নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কমলালেবু আসা থমকে যায় বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠবে না? ঠিক তেমনই কাশ্মীরের আপেল নিয়ে সেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
ভারতের ফল সাম্রাজ্য স্তব্ধ। ফলে গোটা দেশের ফলের বাজারও দিল্লির দিকে তাকিয়ে। যদিও সোমবার সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কাশ্মীরে ফলা আপেল, ন্যাসপাতি-সহ বিভিন্ন ফল যাতে দেশের বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য সমবায় পদ্ধতিতে তা কেনা হবে।
আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করেছিল অগস্ট থেকেই
অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসই আপেল তোলার মরসুম। গত মাসের ৬ তারিখ জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর জনজীবন স্তব্ধ উপত্যকায়। দীর্ঘ কুড়ি-বাইশ দিন বন্ধ থাকার পর আপাতত ল্যান্ডলাইন ফোন পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও বন্ধ ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা। বন্ধ বাজার দোকান। চলছে সেনার টহল। এমনকী মহরমের দিনও শ্রীনগরে কোনও তাজিয়া বার করার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। গত মাসের মাঝামাঝি সময়থেকেই আপেল ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছিলেন। এত ফল এ বার তাহলে কী হবে?
সরকারি পদক্ষেপ
ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা আপেল কিনবে চাষিদের থেকে। যে ভাবে বাংলায় ধান উদ্বৃত্ত হলে সরকার কেনে, আলু উদ্বৃত্ত হলে আরামবাগ, সিঙ্গুরের বিডিও অফিসে আলু ভর্তি লরির লাইন লেগে যায়, ঠিক একই ভাবে আপেল মাণ্ডি করে কাশ্মীরি কৃষকদের থেকে তা সংগ্রহ করবে ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন। কাশ্মীরে তিন ধরনের আপেল হয়। ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’—তিন ধরনের আপেলের ক্ষেত্রেই কুইন্টাল প্রতি দাম ঠিক করে তা কেনা হবে। এবং এই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে।
আপেল উৎপাদনের পরিমাণ
সারা কাশ্মীরে বছরে ২২ লক্ষ মেট্রিকটন আপেল উৎপাদন হয়। এ ছাড়াও প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিকটন ন্যাসপাতি উৎপাদন হয়। এবং এর ৬০ শতাংশ উৎপন্ন হয় উত্তর কাশ্মীরে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে উপত্যকায়, তাতে এখনও পর্যন্ত যা হিসেব, ১০৮ কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতি হয়েছে ইতিমধ্যেই।
কেমন আছে ‘অ্যাপেল টাউন’ সোপোর?
উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা জেলার সোপোরকে বলা হয় ‘অ্যাপেল টাউন’। সেখানে এখন স্বাভাবিক জনজীবন স্তব্ধ। দিন তিনেক আগেই এই সোপোরে এক আপেল ব্যবসায়ীকে টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা। না পেয়ে তাঁর দোকানের ভিতর ঢুকে তাঁর দুই ভাইকে গুলি করে পালিয়ে যায়। বাদ দেয়নি আড়াই বছরের শিশু কন্যাকেও। বুলেটবিদ্ধ ছোট্ট আসমা জান এখন দিল্লির এইমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কয়েকদিন আগেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বলেছিলেন, পাকিস্তানি সেনাদের মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার করে এ পারে থাকা জঙ্গিদের সাংকেতিক ভাষায় আপেল ভর্তি ট্রাক আটকানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, “কী করে এত ট্রাক চলছে? তোমরা আটকাতে পারছ না? আমরা কি এখান থেকে হাতে পরার চুরি পাঠাব?”
উৎপাদিত আপেলের কী অবস্থা?
কয়েক হাজার হেক্টর বাগানের আপেল পাড়ার কাজ শুরুই করা যায়নি। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ হয়ে যাওয়ার কথা। আশঙ্কা, বহু পরিমাণ আপেল গাছেই পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপেল চাষিদের সংগঠনের বক্তব্য, চলতি সপ্তাহের মধ্যে যদি তা শুরু না করা যায়, তাহলে আপেলের আকাল দেখা দেবে সারা দেশে।
এখন কাশ্মীর তাকিয়ে সরকারি পদক্ষেপের দিকে। আর গোটা দেশের ফলের বাজার তাকিয়ে কাশ্মীরের দিকে।