
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এবার থেকে গ্র্যাজুয়েট হলেই হরিয়ানাতে মেয়েদের পাসপোর্ট করে দেওয়া হবে বলে জানালেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পরে কলেজ থেকেই ছাত্রীদের পাসপোর্ট তৈরি করার সব কাজ করে দেওয়া হবে।
শনিবার ডক্টর মঙ্গলসেন অডিটোরিয়ামে ‘হর সর হেলমেট’ অর্থাৎ প্রতিটি মাথায় হেলমেট নামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী খট্টর। সেখানে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী স্কুল, কলেজ ও আইটিআই-এর পড়ুয়াদের হেলমেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেন তিনি।
এই অনুষ্ঠানেই মনোহল লাল খট্টর বলেন, রাজ্যের মেয়েদের শিক্ষা ও তাদের এগিয়ে চলার জন্য অনেক রকমের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তার মধ্যে অন্যতম হল, গ্র্যাজুয়েট হলেই তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে। তাতে আগামী দিনে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ এলে যাতে কোনও রকমের সমস্যায় তাদের পড়তে না হয়। তাছাড়া অনেক রকম সরকারি কাজেও পাসপোর্ট লাগে। এর ফলে রাজ্যের মেয়েরা আরও এগিয়ে যাবে বলেই আশা মুখ্যমন্ত্রীর।
মনোহর লাল খট্টর আরও বলেন, রাজ্য সরকারের তরফে অনেক রকমের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। সবই রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে। হর সর হেলমেট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেমন বাইক চালানোর সময় মাথায় হেলমেট পরার প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করা হচ্ছে, তেমনই ‘বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যের মেয়েদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আবার তেমনই স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বাড়িয়ে তোলার কাজ চলছে। আর এই সব কাজেই যুভ সম্প্রদায় এগিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত কালই অবশ্য হরিয়ানা বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়েছে হিসার জেলার নারনাউন্দের টেগর সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী ঋষিতা। বেস্ট ফাইভে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। শুধুমাত্র ঋষিতা নয়, এবার বোর্ডের পরীক্ষায় যেন মেয়েদের জয়জয়কার। প্রথম তিনটি স্থান অধিকার করেছে মেয়েরা। আর এই তিনটি স্থানে রয়েছে মোট সাতজন মেয়ে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্কুলের উমা, স্নেহা, কল্পনা, নিকিতা ও অঙ্কিতা। পাঁচজনেই পেয়েছে ৯৯.৮ শতাংশ নম্বর। তৃতীয় স্থানে ৯৯.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে রয়েছে চাহক। পাশের হারেও ছেলেদের টেক্কা দিয়েছে মেয়েরা। ছেলেদের মধ্যে পাশের হার ৬০.২৭ শতাংশ। সেখানে মেয়েদের পাশের হার ৬৯.৮৬ শতাংশ।
হরিয়ানাতে এভাবে মেয়েদের এগিয়ে আসা সত্যিই যথেষ্ট ইতিবাচক। কারণ, ভারতের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য সবথেকে বেশি এই রাজ্যেই হয়। হরিয়ানাতে পুরুষের অনুপাতে মেয়ের সংখ্যা ৮৩১, যা ভারতে সবথেকে কম। এখনও অনেক জায়গায় কন্যা ভ্রূণ হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, জন্মের পরেও মেয়েদের স্বাধীনতা অনেক কম এই রাজ্যে। বিশেষ করে হরিয়ানার গ্রামীণ এলাকায় খাপ পঞ্চায়েতের দাপটে মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা এখনও বিপন্ন। সন্তান জন্ম দেওয়ার ও পরিবার সামলানোর বাইরে তাঁদের কোনও অধিকার রয়েছে সেটা অনেকেই মানতে চান না।
এই সামাজিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েরা যে পড়াশোনা করছে, সেটাই অনেক অর্থবহ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু পড়াশোনা করা নয়, ছেলেদের প্রতি পদে টেক্কা দিচ্ছে তারা। আর সেই কাজে প্রশাসনের এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের আরও সাহস যোগাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।