
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনার সংক্রমণকে কাবু করতে কি কাজে আসতে পারে মৃগীরোগের দাওয়াই? ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরে এমন দাবি করছেন দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির (ICGEB) গবেষকরা। প্রাণঘাতী আরএনএ ভাইরাস (RNA Virus) সার্স-কভ-২ এর আরএনএ প্রোটিনের আস্ফালনই নাকি থামিয়ে দিতে পারে এই ওষুধ, গবেষকদের দাবি এমনটাই। এই ড্রাগের পুনর্ব্যবহার সম্ভব কিনা, সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চকে (আইসিএমআর)চিঠি লিখেছে আইসিজিইবি।
ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিড (valproic acid)মৃগীরোগের এই কার্যকরী ওষুধের পেটেন্ট এখন শেষ হয়ে গেছে। ফের এই ওষুধের ট্রায়াল করে তাকে ফিরিয়ে আনা যায় কিনা সেই নিয়েই চেষ্টা চালাচ্ছেন আইসিজিইবি-র ট্রান্সক্রিপশনাল রেগুলেশন বিভাগের প্রধান ড. নীল সরোবর ভবেশ। তিনি বলেছেন, “চেনা ওষুধেই সারছে কিনা করোনার সংক্রমণ সেটাই এখন চেষ্টা বিজ্ঞানীদের। অ্যান্টি-ভাইরাল যত রকমের ড্রাগ আছে সব নিয়েই পরীক্ষা চলছে। দেখা গেছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে পারছে মৃগীরোগের দাওয়াই ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিড।” পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) এবং আইসিএমআরের ল্যাবে এই ড্রাগ নিয়ে গবেষণা জন্য বিজ্ঞানীদের আবেদন জানিয়েছেন ড. নীল সরোবর ভবেশ।

আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আনলেন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, ভাইরাল প্রোটিন মারবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
মৃগীরোগের দাওয়াই নাকি জব্দ করতে পারে আরএনএ ভাইরাসকে
ড. ভবেশ বলেছেন, Depacon ও Stavzor এই দুই ব্র্যান্ডে বিক্রি হত মৃগীরোগের এই দাওয়াই। ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিডকে নতুন ভাবে ফিরিয়ে আনলে করোনা-প্রতিরোধী ভাল ড্রাগ হতে পারে বলেই দাবি করেছেন ড. ভবেশ। তিনি বলেছেন, ল্যাবরেটরিতে ভাইরাল স্ট্রেনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশের উপর এই ড্রাগের প্রয়োগ করা হয়েছে। ‘হাই থ্রুপুট ভার্চুয়াল স্ক্রিনিং’ (HTVS)-এর পরে চারটে ডেটাবেস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এনার্জি ক্যালকুলেশন ও মলিকিউলার বাইন্ডিং সাইমুলেশনের পরে দেখা গেছে ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিড সিওএ এই করোনার ভাইরাল স্ট্রেনকে আটকাতে সক্ষম। অর্থাৎ আরএনএ ভাইরাসের আরএনএ পলিমারেজকে রুখে দিতে পারে এই ড্রাগ। কাজেই আরএনএ প্রোটিন আর কোষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না।

On the basis above we believe that an established drug Valproic acid Co-A (not under patent currently) may be repurposed to inhibit the RNA depended RNA polymerase of the virus
The details are on this link https://t.co/CJMtuhrzRz (4/5) @US_FDA @realDonaldTrump @Novartis @ICGEB— नील सरोवर भवेश Neel Sarovar Bhavesh (@neelbs) March 23, 2020
মৃগীরোগ ছাড়াও বাইপোলার ডিসঅর্ডার, মাইগ্রেনের চিকিৎসাতেও কাজে আসে এই ড্রাগ। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সঠিক ডোজে ব্যবহার করা না হলে লিভারের সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের উপর এই ড্রাগের প্রয়োগ নিষিদ্ধ। তবে ড ভবেশ বলেছেন, এই ওষুধকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভ্যাল্পরোয়িক অ্যাসিডের নতুন ফর্মুলা সার্বিকভাবে কাজে আসতে পারে।
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বানিয়েছেন দেশের প্রথম কোভিড-১৯ টেস্ট-কিট, প্রসবের সময়ও পিছিয়েছিলেন যে ভাইরোলজিস্ট
কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন নতুন ড্রাগ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। উঠে আসতে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিও। ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (hydroxychloroquine) নিয়ে গবেষণা চলছে ভারত, আমেরিকা, চিনে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এই ড্রাগকে অনুমোদন করলে সার্বিকভাবে রোগীদের উপর প্রয়োগের অনুমতি দেয়নি। ইবোলা প্রতিরোধী ড্রাগ রেমডেসিভির নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বিশাল রাও করোনা রুখতে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতির কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সাইটোকাইন (পেপটাইড যা কোষে বার্তা পাঠায়)প্রোটিনের সমন্বয়ে এমন মিশ্রণ বানানো হয়েছে যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর উপর ইনজেক্ট করা হবে। এই প্রোটিনের মিশ্রণ রোগীর দেহকোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। ভাইরাল প্রোটিনগুলোর মোকাবিলা করতে শরীরের সহজাত প্রোটিনগুলোকে উদ্দীপিত করবে। এমন চিকিৎসা পদ্ধতি যা ভেতর থেকে সংক্রমণকে নির্মূল করবে।