
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দৃষ্টিহীনদের বন্ধু হবে। যে কোনও দরকারি কাজ করে দেবে। নির্দেশ মানবে লহমায়। প্রয়োজনে গল্প করে সঙ্গও দেবে। অন্ধত্বই সঙ্গী হয়েছে যাঁদের, তাঁদের সঙ্গে দিতেই নতুন রকম অ্যাপ তৈরি করে ফেলেছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রাক্তনী।
চোখের আলো চলে গেছে ২০ বছর হল। ওষুধের ক্রিয়ায় দৃষ্টি হারিয়েও পড়াশোনা থামেনি। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনী প্রাক্তনী প্রমিত ভার্গব এখন নামী প্রযুক্তিবিদ। ভিসিওঅ্যাপস টেকনোলজির কর্ণধার। ৫৩ বছরের প্রমিত বলেছেন, কম্পিউটার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও অসাধ্য সাধনই করা যায়। এই অ্যাপ মুখের কথায় কাজ করবে। চোখে দেখতে পান না যাঁরা, তাঁদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি।
“আমি যখন দৃষ্টি হারাই তখন প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। পড়াশোনা বা যে কোনও কাজের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ। তাই টেকনোলজিকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে দৃষ্টিহীন মানুষরা অসহায় না হয়ে পড়েন। আত্মনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন,” বলেছেন প্রমিত ভার্গব।
দৃষ্টিহীনদের হাত ধরবে ‘লুই ভয়েস কন্ট্রোল’
প্রমিত বলেছেন, লুই হল ভয়েস অ্যাপ। মুখের কথা শুনে কাজ করবে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ও মোটোরোলায় চাকরি করার সময় এমন অ্যাপ বানানোর কথা ভেবেছিলেন। ফরাসি আবিষ্কারক ও শিক্ষক লুই ব্রেইল যিনি দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার জন্য ব্রেইল পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, তাঁর নামেই এই অ্যাপের নামকরণ করেছেন প্রমিত।
কীভাবে কাজ করবে এই অ্যাপ? যেভাবে ভয়েস মেসেজ পাঠানো হয় সেভাবেই লুইকে নির্দেশ দেওয়া যাবে। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো, মোবাইলে ফোন করা বা চ্যাট করা, এমনকি ওলা-উবারে গাড়ি বুক করে দিতেও পারবে লুই। স্মার্টফোনের ব্যবহার করতে পারবে, ইন্টারনেটে সার্চ করা থেকে পড়াশোনায় সাহায্য—সবই নিখুঁতভাবে করবে লুই। বিভিন্ন বিষয় তার ডেটা সিস্টেমে সাজিয়ে দিয়েছেন প্রমিত। গুগলের মতোই যে কোনও অজানা বিষয় জানিয়ে দিতে পারবে লুই। কথাবার্তা চালানো যাবে লুইয়ের সঙ্গে। প্রমিত বলছেন, দৃষ্টিহীনদের বন্ধুর মতোই সঙ্গ দেবে এই অ্যাপ।
এখন তো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সিরি, অ্যামাজনের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিস্টেম অ্যালেক্সা এসে গেছে প্রযুক্তির বাজারে। তাই এই অ্যাপ কতটা আলাদা? প্রমিত বলেছেন, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অ্যালেক্সাকে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে। যেমন গুগলে টাইপ করে সার্চ করা যায় তেমনি অ্যালেক্সাকে প্রশ্ন করলে তার স্পিকারে উত্তর ভেসে আসবে। কিন্তু লুই অ্যাপ আরও উন্নত। শুধু উত্তর দেবে সঠিক কাজটাও করে দেবে। অন্যান্য ভয়েস অ্যাপে পরিষেবার বিষয় জানা যায়, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে গাড়ি বুক করা বা ওলা-উবারে গাড়ির সময় শিডিউল করা যায় না। লুই অ্যাপ এই ঘাটতি পূরণ করবে।
নির্দিষ্ট সময় গাড়ি বুক করতে হলে শুধু নির্দেশ দিতে হবে। সেই মতো গাড়ি বুক করা, ভাড়া কতটা বাড়ছে বা কমছে সেটা জানানো, নির্দেশ মতো পিকআর লোকেশন ঠিক করা, চালকের সঙ্গে কথা বলা সবই পারবে এই অ্যাপ। প্রয়োজন হলে বুকিং ক্যানসেল করতেও পারবে। প্রমিত জানিয়েছেন, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই অ্যাপ ইতিমধ্যেই এসে গেছে। ৭০টি দেশে এই অ্যাপ চালু হয়েছে। তবে এর প্রযুক্তিতে আরও বদল করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রমিত ভার্গব। লুই যাতে আরও বেশি কাজ করতে পারে, বিপদে পড়লেও যাতে এই অ্যাপের সুবিধা নেওয়া যেতে পারে, সে চেষ্টা করছেন প্রযুক্তিবিদ।