
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলায় নিজের দুই তরুণী মেয়েকে বলি দিয়েছেন এক স্কুল শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী। এই ঘটনায় অবাক হয়েছে পুলিশও। মেয়েদের বলির পরেও নাকি কোনও তাপ-উত্তাপ ছিল না দম্পতির মধ্যে। উল্টে তারা পুলিশকেই নাকি ধমক দিচ্ছিলেন। সেই সময়ই শিক্ষিকা দাবি করেন, তিনি নাকি মানুষ নন, তিনি ভগবান শিব। এমনকি করোনাভাইরাস চিন থেকে নয়, তাঁর শরীর থেকে এসেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
চিত্তোরের মদনপাল্লে টাউনে এই ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। হতভম্ব তদন্তকারী অফিসাররাও। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত। মহিলার নাম পদ্মজা ও তাঁর স্বামীর নাম পুরুষোত্তম নাইডু। এলাকার দুটি স্কুলের প্রিন্সিপাল তাঁরা। তারপরেও তাঁদের মতো মানুষ কীভাবে কুসংস্কারে বিশ্বাস করে এই কাণ্ড ঘটালেন সেটা ভেবেই পাচ্ছেন না তাঁরা।
পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন সেখানে চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। দুই তরুণী মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। পুলিশকে দেখে পুরুষোত্তম বলেন, “আমি কি বোকা নাকি, আমি পিএইচডি করেছি।” অন্যদিকে পদ্মজা তাঁর স্বামীর উদ্দেশে বলেন, “তুমি আর আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারলে না। তাহলেই মেয়েরা বেঁচে ফিরত।”
তারপরেই নাকি পুলিশের সামনে পদ্মজা বলেন, “আমি এই মুহূর্তে কারও স্ত্রী না। আমি ভগবান শিব। আমার শরীর থেকেই করোনাভাইরাস এসেছে। চিন থেকে আসেনি। আমি আগেই বলেছি মার্চ মাসে করোনাভাইরাস চলে যাবে। কোনও ভ্যাকসিনের প্রয়োজন পড়বে না।”
দম্পতির দুই মেয়ের নাম আলেখ্য ও সাই দিব্যা। আলেখ্য বয়স ২৭ বছর, সাই দিব্যার ২২ বছর। আলেখ্য ভোপালে মাস্টার্স শেষ করেছেন। দিব্যা বিবিএ নিয়ে স্নাতক করেছেন। তিনি মুম্বইয়ের এআর রহমান মিউজিক স্কুলেরও ছাত্রীও। লকডাউনে দুই মেয়েই বাড়ি ফিরেছিলেন। এতদিন তাঁরা বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকছিলেন।
স্থানীয়রা বলেছেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পরেই ওই দম্পতির ব্যবহারে অনেক বদল লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বাড়ি থেকে বিশেষ বেরোতেন না তাঁরা। এলাকায় কারও সঙ্গে মিশতেনও না। তাঁদের হাবভাবও নাকি বদলে গিয়েছিল অনেক। দুই মেয়ে ফেরার পরেও এই বদলটা দেখা গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন রাতে বাড়ি থেকে অদ্ভুত চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে যান এলাকার লোকজন। দরজা ধাক্কা দিলেও খুলছিলেন না ওই দম্পতি। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দরজা ভেঙে জোরজবরদস্তি বাড়িতে ঢুকে দেখে ভয়ানক কাণ্ড। ঠাকুরঘরে একটি মেয়ের রক্তাক্ত দেহ শোয়ানো রয়েছে। অন্য ঘরে পড়ে রয়েছে আর এক মেয়ের দেহ। দুটি দেহই লাল কাপড়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েদের দেহের কাছে পদ্মজা নাচছিলেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশি জেরায় শিক্ষিকা জানিয়েছেন, কলিযুগ শেষ হয়ে এসেছে। আজ সোমবার ভোর থেকেই নাকি সত্যযুগ শুরু হচ্ছে। তাই ভোরের আলো ফোটার আগেই দুই মেয়েকে বলি দিয়েছেন তিনি। তাঁরা সত্যযুগ শুরু হওয়ার পরে আবার বেঁচে ফিরবেন।
মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান মানসিক রোগে ভুগছিলেন দু’জনেই। মেয়েদের বলি দেওয়ার পরে নাকি নিজেদেরও বলি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। তাহলে চারজন সত্যযুগে বেঁচে ফিরবেন এই আশা ছিল তাঁদের। মেয়েরাও নাকি সবটা জানত। তাদের সম্মতিতেই সব হয়েছে বলে খবর। দম্পতির এই ধরনের দাবিতে ক্রমেই অবাক হয়ে যাচ্ছে পুলিশ।