
শঙ্খদীপ দাস
পরিবারতন্ত্র নিয়ে কংগ্রেসকে আঘাত করা তাঁর পছন্দের বিষয়। আগেও বহু বার করেছেন। কিন্তু এই প্রথম ‘ফ্যামিলি পার্টিদের’ সমালোচনায় নামলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিহার জয়ের পর বুধবার সন্ধ্যায় বিজেপি সদর দফতরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, “ফ্যামিলি পার্টি দেশের জন্য বিপজ্জনক। এই ধরনের পরিবারের পার্টি সব থেকে বিপদের।”
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এমন অনেক পার্টি রয়েছে। যাদের ভাবনা সংকীর্ণ। যারা বিকাশ বা উন্নয়নের কথা ভাবে না। এদের বিরুদ্ধে ঠারেঠোরে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর নাম না করে কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেন, একটা জাতীয় দল ছিল। সেটাও পরিবারতন্ত্রের গ্রাসে চলে গিয়েছে।
অনেকে ভাবতেই পারেন পরিবারতন্ত্র আর ফ্যামিলি পার্টি তো একই! কিন্তু না তা নয়। প্রধানমন্ত্রী সে কথা বোঝাতে চাননি। যেমন কংগ্রেস একটা সর্বভারতীয় দল ছিল। স্বাধীনতার আগে সেই দল তৈরি হয়েছে। তা কোনও এক ব্যক্তি বা পরিবার তৈরি করেনি। পরে সেই দল একটা পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে।
আর ফ্যামিলি পার্টি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন তামিলনাড়ুর ডিএমকে, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল, বিহারের আরজেডি, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা, পঞ্জাবের অকালি দল, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, জম্মু কাশ্মীরের পিডিপি, ন্যাশনাল কংগ্রেস ইত্যাদিকে। কারণ, এই আঞ্চলিক দলগুলি কোনও একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে। তার পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা সেই পার্টির হাল ধরেছে, বা ধরব ধরব করছে।
যেমন, করুণানিধি ডিএমকে তৈরি করেছিলেন। এখন তাঁর ছেলে স্ট্যালিন সেই দলের নেতা। তাঁর বোন কানিমোজি, দাদা আলাগিরি পার্টির বড় পদে রয়েছেন। বিহারে লালু প্রসাদের পর তেজস্বীই আরজেডির নেতৃত্বে। সমাজবাদী পার্টি তৈরি করেছিলেন মুলায়ম সিংহ। তাঁর পর অখিলেশ যাদব মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।
মজার ব্যাপার আগে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ‘ফ্যামিলি পার্টিদের’ সমালোচনা করেননি। তাঁরা যে দেশের জন্য বিপজ্জনক তাও কখনও মনে হয়নি। কারণ, বিজেপির দীর্ঘদিনের ও সব থেকে পুরনো শরিক শিবসেনাকে তো তাহলে ফ্যামিলি পার্টি বলে সমালোচনা করতে হত। তা হলে কি বন্ধুত্ব থাকত? কারণ, বালাসাহেব ঠাকরে সেই পার্টি তৈরি করেছেন। ভাইপো রাজ ঠাকরে যোগ্য হলেও তিনি রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী করেছিলেন ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবও তাঁর ছেলে আদিত্যকে তৈরি করছেন ব্যাটন তুলে দেবেন বলে।
শুধু তা নয়। বিজেপির আর এক পুরনো শরিক পঞ্জাবের অকালি দল, তারাও ফ্যামিলি পার্টি। প্রকাশ সিংহ বাদল সেই পার্টি তৈরি করেছিলেন। তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল ও পুত্রবধূ হরসিমরত কউরই এখন সে দলের মুখ।
কিন্তু শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক চটেছে। এখন তীব্র বিরোধিতা। মহারাষ্ট্রে সাপে নেউলে সম্পর্ক। আর সম্প্রতি কৃষি বিল নিয়ে বিরোধিতা করে অকালিও এনডিএ জোট ছেড়েছে। ফলে কোনও বড় ‘ফ্যামিলি পার্টি’ আর এনডিএ-তে নেই। ছোট খাটো এক আধটা অবশ্য এনডিএ-তে রয়েছে। যেমন উত্তরপ্রদেশে আপনা দল। কিন্তু তারা এতটাই ছোট যে এ কথায় রাগ দেখানোর জোরও তাদের নেই।
এই সমালোচনার জবাব এখনও দলগত ভাবে কেউ দেয়নি। কারণ, প্রতিক্রিয়া দিলেও মেনে নেওয়া হবে যে তাঁরা ফ্যামিলি পার্টি। আর মোদী তো কারও নাম বলেননি। তাই কেউ পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানালে বিজেপি বলতে পারে, ‘পড়ল কথা সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে।’ তবে হ্যাঁ এ ব্যাপারে মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে বিরোধীদের পুরনো আক্রমণ তো রয়েছেই। তাঁরা বলেন, মোদীর পরিবার হয়তো নেই ঠিকই। কিন্তু মোদী-অমিত শাহ জুটিই বিজেপি পার্টিটা হাইজ্যাক করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মুখে যাই কথা বলুন, দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। মোদী-অমিত শাহর কথা মতোই কাজ চলে। আর তাদের কাছের মানুষরাই দলে, দলের বাইরে, ব্যবসায় সব সুযোগ সুবিধা পান।