
বড় সাফল্য ভারতীয় সেনার, কুপওয়ারায় খতম লস্কর জঙ্গি ইদ্রিস ও তার শাগরেদ, উদ্ধার আধুনিক চিনা পিস্তল
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা ফৌজের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যেমন শক্তিশালী প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় বাহিনী, তেমনি উপত্যকাকে জঙ্গি মুক্ত করতে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল ফোর্স।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাক মদতেই যে নাশকতা চালানো বড়সড় পরিকল্পনা ছিল লস্কর জঙ্গিদের সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল। জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারায় যে দুই লস্কর জঙ্গিকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে ভারতীয় সেনা তাদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে যার বেশিরভাগই পাকিস্তানের অস্ত্র কারখানায় তৈরি। জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে চিনের তৈরি আধুনিক পিস্তলও।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা ফৌজের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যেমন শক্তিশালী প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় বাহিনী, তেমনি উপত্যকাকে জঙ্গি মুক্ত করতে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল ফোর্স। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কুপওয়ারায় জঙ্গি দমন অভিযানে নেমেছে ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, শনিবার বেলার দিকে নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরত্বে দুই লস্কর জঙ্গিকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। এই দুই জঙ্গির মধ্যে একজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে সেনাবাহিনী। লস্করের সক্রিয় সদস্য ২৩ বছরের ইদ্রিস আহমেদ ভাট।
কুপওয়ারার হান্দওয়ারায় বাসিন্দা ইদ্রিস। ২০১৮ সালে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিল। সেখানে পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈবা সংগঠনের থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয়। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, ফিদায়েঁ প্রশিক্ষণও ছিল ইদ্রিসের। গত বছর ফের সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢোকে সে। উপত্যকার লস্কর গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠে। কমবয়সী ইদ্রিসের নেটওয়ার্কও ছিল বিশাল। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, উপত্যকার তরুণদের জঙ্গিদলে টেনে আনার কাজও করত ইদ্রিস। পাশাপাশি তার অস্ত্র প্রশিক্ষণও ছিল সাঙ্ঘাতিক।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানাচ্ছেন, অনুমান করা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি সেনা ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালানোর মতলব ছিল দুই জঙ্গির। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ইদ্রিসের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে একে-৪৭ এর সঙ্গে শতাধিক বুলেট। একটি অত্যাধুনিক পিস্তল যা চিনের তৈরি। অস্ট্রিয়ান টেকনোলজিতে তৈরি চারটি গ্রেনেড। পুলিশ জানিয়েছে, ওই গ্রেনেডগুলি তৈরি করা হয়েছে পাকিস্তানের অস্ত্র কারখানায়। তার ছাপও রয়েছে।
এই ধরনের গ্রেনেড জইশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠীও ব্যবহার করে বলে জানিয়েছে সেনা ও পুলিশ সূত্র। ২০০১ সালে সংসদ হামলার সময়েও এই ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া ৪৮০ গ্রাম ওজনের এক একটি অ্যান্টি-পার্সোনেল গ্রেনেডে ৯৫ গ্রাম বিস্ফোরক পেন্টাএরিথ্রিটল টেট্রানাইট্রেট বা পিইটিএন ভরা ছিল। তাছাড়াও ছিল পাঁচ হাজারের বেশি স্টিলের বল। এই গ্রেনেড ফাটলে একসঙ্গে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটা সম্ভব।
মেজর জেনারেল বীরেন্দ্র ভাট জানিয়েছেন, কুপওয়ারার নওগাম সেক্টরের কাছে পাকিস্তানের পোস্টের দিকে তাদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সম্ভবত সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টায় ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ঘিরে ফেলেন জওয়ানরা। নিমেষে বুলেট ফুঁড়ে দেয় ইদ্রিস ও আরও এক লস্কর জঙ্গিকে। মেজর জেনারেলের কথায়, উপত্যকায় জঙ্গিদের অর্থ ও অস্ত্র পাঠানোর জন্য ড্রোনের ব্যবহার করছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলো। ইদ্রিসের কাছ থেকে যে অস্ত্র উদ্ধার হযেছে সেগুলি সবই এসেছে পাকিস্তান থেকে। এই পাক ড্রোনের বাড়াবাড়ি বন্ধ করার জন্য সীমান্তে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করছে ভারতীয় বাহিনী।