
করোনায় কি ঝাপসা হচ্ছে দৃষ্টিও! রেটিনারও ক্ষতি করতে পারে ভাইরাস, দাবি ডাক্তারদের
করোনা সংক্রমণের কারণে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে এমন খবর পাওয়া গেছে দেশের নানা জায়গা থেকেই। আহমেদাবাদের এক রোগী জানিয়েছেন, তাঁর চোখে কালো কালো স্পট পড়েছিল। পরীক্ষা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে তিনি কোভিড পজিটিভ। ধীরে ধীরে দৃষ্টিও ঝাপসা হতে শুরু করে। পরে সার্জারি করাতে হয়।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সংক্রমণে চোখও খারাপ হচ্ছে? ঝাপসা হচ্ছে দৃষ্টি? ডাক্তাররা বলছেন, কয়েকজন রোগীর মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা গেছে। সংক্রমণ সারিয়ে ওঠার পরে ক্যাটারাক্ট বা ছানি পড়ার মতো রোগ হচ্ছে চোখে। একটু একটু করে ঝাপসা হচ্ছে দৃষ্টি। কারও আবার রেটিনায় এমন প্রভাব পড়ছে যে চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি চলে যাচ্ছে।
ভাইরাস সংক্রমণে আর যে কী কী রোগ হবে সে নিয়েই ভাবিত গবেষক, ডাক্তাররা। এতদিন জানা গিয়েছিল, সংক্রমণ শরীরে ছড়ালেই নাকের গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা চলে যাবে, মুখের স্বাদ থাকবে না। এখন শোনা যাচ্ছে, ভাইরাস এমনভাবে শিরা-ধমনীগুলোকে আক্রমণ করছে যে সারা শরীরে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হচ্ছে না। যে কারণেই রক্ত জমাট বাঁধছে। যার ফলে কখনও হৃদপেশিতে রক্ত জমে হার্টের রোগ হচ্ছে আবার কখনও মাথায় অক্সিজেন পৌঁছনো বন্ধ হয়ে গিয়ে জটিল মস্তিষ্কের রোগ দেখা দিচ্ছে। এই সবকিছুর প্রভাব পড়ছে চোখেও। দৃষ্টিও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণের কারণে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে এমন খবর পাওয়া গেছে দেশের নানা জায়গা থেকেই। আহমেদাবাদের এক রোগী জানিয়েছেন, তাঁর চোখে কালো কালো স্পট পড়েছিল। পরীক্ষা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে তিনি কোভিড পজিটিভ। ধীরে ধীরে দৃষ্টিও ঝাপসা হতে শুরু করে। পরে সার্জারি করাতে হয়। একইরকম সমস্যার কথা বলেন আরও এক রোগী। করোনা সংক্রমণের কারণে তাঁর ৮০ শতাংশ দৃষ্টিশক্তিই চলে গিয়েছিল। ডাক্তাররা বলছেন, এই বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। করোনার কারণেই এমন রোগ হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা হচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণে শরীরে যেসব রোগ হচ্ছে বা যে ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে তার সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে বলেই দাবি করেছেন ডাক্তাররা।
করোনায় কীভাবে ক্ষতি হচ্ছে চোখের?
দিল্লির অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল কলেজের (এইমস) ডাক্তার হরজিৎ সিং বলেছেন, কোভিড সংক্রমণ দু’ভাবে প্রভাব ফেলছে চোখে।
প্রথমত— চোখের পেশি দুর্বল হচ্ছে। সাময়িকভাবে দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে অনেক রোগীর। করোনা সারিয়ে ওঠার পরে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যেই। তবে সংক্রমণ যদি পুরোপুরি সেরে যায় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তাহলে দৃষ্টি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত—অপথ্যালমোলজিস্টরা বলছেন, এই সমস্যা আরও ভয়ঙ্কর। চোখের রেটিনা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে পুরোপুরি দৃষ্টি চলে যাচ্ছে। এই রোগের কারণ ‘ভাস্কুলার ব্লকেজ’ (Vascular Blockage) ।
ডাক্তাররা বলছেন, এই ভাস্কুলার ব্লকেজের বড় কারণ হল থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধা। শিরা ও ধমনীর মধ্যে এমনভাবে রক্ত জমাট বাঁধছে যে রক্ত সঞ্চালন বাধা পাচ্ছে। ব্লাড ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধছে। শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের কোষে রক্ত পৌঁছনো বন্ধ হচ্ছে, পেশির শক্তি কমছে, যার প্রভাব পড়ছে চোখেও।
কর্নাটক অপথ্যালমিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ডক্টর রাজশেখর বলছেন, করোনা সারিয়ে ওঠার সপ্তাহ দুয়েক পরেই অনেক রোগী আসছে চোখের সমস্যা নিয়ে। কনজাঙ্কটিভাইটিসের মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। চোখ লাল হচ্ছে, সেই সঙ্গে জ্বালা, ব্যথা, চুলকানি। চোখের কর্নিয়ায় তীব্র প্রদাহ হচ্ছে যাকে বলে কেরাটাইটিস (Keratitis) । চোখ ফুলে যাচ্ছে, জল পড়ছে এমনকি চোখের স্নায়ুর অনুভূতি চলে যাচ্ছে। প্যারালাইসিস হচ্ছে চোখেও। যে কারণে কনজাঙ্কটিভাল কেমোসিস (Conjunctival Chemosis) রোগ হচ্ছে চোখে।
মস্তিষ্কের রোগও এর সঙ্গে জড়িত। ডাক্তাররা বলছেন, করোনা সংক্রমণে স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অধিকাংশ রোগীই। অনেকের আবার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশের শঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। এইসবের কারণই হল মস্তিষ্কের কোষে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ভাইরাস। গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের কোষে খুব তাড়াতাড়ি বিভাজিত হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারছে সার্স-কভ-২ ভাইরাস। সংখ্যায় বেড়ে কোষকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলছে। ফলে অক্সিজেন পৌঁছতে পারছে না মস্তিষ্কের কোষে। ধীরে ধীরে সেই কোষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই রক্ত জমাট বাঁধতে দেখা গেছে মস্তিষ্কে।
অনেকের আবার মস্তিষ্কে অ্যাকিউট ডিমায়েলিনেটিং সিন্ড্রোম (এডিএস) দেখা দিচ্ছে। এই রোগে মস্তিষ্কের স্নায়ু দুর্বল হতে থাকে। স্মায়ুতন্তুর মায়েলিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে স্নায়ু আর বার্তা পাঠাতে পারে না। এই রোগ এমন এক নিউরোলিজক্যাল ডিসঅর্ডার যার থেকে পেশির ব্যথা, খিঁচুনি, ব্লাডার এবং বাওয়েল মুভমেন্টও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়ানোর কারণে প্রভাব পড়তে পারে দৃষ্টিশক্তিতেও।