
দ্য ওয়াল ব্যুরো: খুব ঠান্ডায় ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের পরিকাঠামো নেই ভারতে। তাই দেশের বাজারে ফাইজারের টিকা আসবে কিনা সে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এদিকে ডিসেম্বরের শেষ থেকেই মোডার্না, ফাইজার সহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি তাদের টিকার বিতরণ শুরু করে দিতে পারে। দেশের বাজারে কী কী টিকার বিতরণ হবে সে প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষবর্ধন বলেছেন, ফাইজারের টিকা নিয়ে এত বেশি ভাবনাচিন্তার দরকার নেই। ভারতেই আরও পাঁচ টিকার ট্রায়াল চলছে যাদের মধ্যে তিনটি চূড়ান্ত পর্বে রয়েছে।
হর্ষবর্ধন বলেছেন, ফাইজারের টিকায় এখনও ছাড়পত্র দেয়নি মার্কিন স্বাস্থ্য দফতরও। তাছাড়া ফাইজার সবচেয়ে আগে আমেরিকাতেই টিকার বিতরণ করবে। স্থানীয়দের টিকা দেওয়া হবে আগে। পরে অন্যান্য দেশে টিকা বিক্রি করা হবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ফাইজারের টিকা সংরক্ষণও একটা বড় ব্যাপার। তার জন্যও চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে মার্কিন স্বাস্থ্য দফতরকে। কারণ , এই টিকা সংরক্ষণের জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। টিকা বিমানে চাপিয়ে নিয়ে যেতে হলেও এই ঠান্ডাতেই সংরক্ষণ করে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত যে কোনও ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৬-৪৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ফাইজারের টিকা যেভাবে তৈরি হয়েছে তাতে টিকার উপাদান টাটকা রাখতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি বা -৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয়। এত কম তাপমাত্রা তৈরি করতে হলে কোল্ড স্টোরেজে উন্নত পরিকাঠামো থাকা দরকার। সে ব্যবস্থা এই মুহূর্তে ভারতে নেই। আর এত তাড়াতাড়ি দেশের সব রাজ্যে এমন কোল্ড-চেন তৈরি করা সম্ভবও নয়।
দেশের আরও পাঁচ টিকার সম্ভাবনা খুব জোরালো, বলেছেন হর্ষবর্ধন। যার মধ্যে অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় তৈরি সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকা, ভারত বায়োটেক ও জাইদাস ক্যাডিলার টিকা তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালে রয়েছে। বাকি দুই সংস্থার টিকাও তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল করছে।
সেরাম জানিয়েছে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কোভিশিল্ড টিকার ১০ কোটি ডোজ তৈরি হয়ে যাবে। কম দামেই দেশের বাজারে টিকার বিতরণ হবে বলে জানিয়েছেন সেরামের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা। কেন্দ্রীয় সরকারকে ২৫০ টাকা প্রতি ডোজে টিকা বিক্রি করা হবে আর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলিকে হাজার টাকা প্রতি ডোজের হিসেবে টিকা বিক্রি করা হবে। অক্সফোর্ড দাবি করেছে টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী। ব্রিটেনে টিকার ছাড়পত্র পেলেই দেশের বাজারে টিকার বিতরণ শুরু করে দেবে সেরাম ইনস্টিটিউট।
এদিকে ভারত বায়োটেক-আইসিএমআরের টিকার ট্রায়ালও তরতরিয়ে এগোচ্ছে। দেশের ২৫টি জায়গায় ২৬ হাজার জনকে টিকা দিচ্ছে ভারত বায়োটেক। প্রাথমিকভাবে টিকা ৬০ শতাংশ কার্যকরী বলে দাবিও করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ভারত বায়োটেকের টিকা চলে আসতে পারে দেশের বাজারে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকার ট্রায়াল শুরু হচ্ছে এ সপ্তাহেই। হায়দরাবাদের ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরিকে স্পুটনিক ভি টিকার ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রেড্ডিসও প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টিকার ডোজের উৎপাদন শুরু করেছে।
জাইদাস ক্যাডিলাও তাই জাইকভ ডি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। হায়দরাবাদের বায়োলজিক্যাল ই প্রথম দুই পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়ি সামনে আনবে।
আগামী বছরের মাঝামাঝি দেশের ২৫-৩০ কোটি মানুষকে টিকার ডোজ দেওয়া হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। হর্ষবর্ধন বলেছেন, সে জন্য আগামী বছরের মধ্যেই প্রায় ৫০ কোটি টিকার ডোজ তৈরি হয়ে যাবে।