
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০৩৫ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন কোম্পানি হয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিল মুকেশ আম্বানির রিল্যায়ান্স। সে পথেই আরও এক ধাপ অগ্রগতি হল এ বছরেই। বিশ্বে প্রথম উৎপাদিত ‘কার্বন-নিউট্রাল’ তেলের উৎপাদন, পরিশোধন, বিতরণের জন্য রিল্যায়ান্সের সঙ্গেই চুক্তি করল মার্কিন কোম্পানি।
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গোষ্ঠী। গুজরাতের জামনগর এবং কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকায় কেজি-ডি৬ — এই দু’টি তেল শোধনাগার রয়েছে মুকেশ অম্বানির সংস্থার। যার মধ্যে জামনগরের তেল শোধনাগারে প্রায় ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল তৈরির জন্য চুক্তি করেছে মার্কিন সংস্থা অক্সিডেন্টাল। এই চুক্তির তত্ত্বাবধানে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ম্যাকুয়েরি। অক্সিডেন্টালের ‘অক্সি লো কার্বন ভেঞ্চারস’ ইউনিট থেকে ভিএলসিসি সি পার্ল জাহাজে চেপে তেল এসে পৌঁছেছে জামনগরের শোধনাগারে। এবার থেকে এই তেলের উৎপাদন, শোধন, বিতরণ, সংরক্ষণ সবই করতে পারবে মুকেশ আম্বানির সংস্থা।

কার্বন-নিউট্রাল তেল কী? সোজা কথায় বলতে গেলে, যে তেলের উৎপাদন ও পরিশোধনের সময় কার্বন, সালফারের মতো বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হবে না। এই তেলের ব্যবহারে পরিবেশে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণও কমবে। যার অর্থ হল বায়ুদূষণের মাত্রা কমবে। কাঠ, কয়লা বা মাটির নিচের তেল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ফলে তৈরি হয় কার্বন ডাইঅক্সাইড। কার্বন বায়ুমণ্ডলে থেকে যায় হাজার হাজার বছর। মূলত এই কার্বনের জন্যই গ্রিনহাউস গ্যাসের সৃষ্টি। গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবেই বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডল দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের পিছুপিছু এসেছে আবহাওয়া পরিবর্তন। ডিজেল, কেরোসিন বা কাটা তেলের সম্পূর্ণ দহন হয় না। অসম্পূর্ণ দহনের ফলে সৃষ্টি হয় কার্বন ও সালফারজাত দু’টি বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড। এরই সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক যৌগের সূক্ষ্ম কণা সরাসরি বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। এর জেরে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। শহরে যে কারণে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এই বিষাক্ত গ্যাসগুলি মানুষের দেহে ও ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
কার্বন-নিউট্রাল তেলে এইসমস্ত বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয় না। এই ধরনের তেল সাধারণ জৈব তেল তথা বায়োডিজেল, বায়োইথানল, মিথানল ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ উপাদান বা নানারকম বর্জ্য পদার্থ পুনর্ব্যবহার করে তৈরি হয়। ইউরোপ, আমেরিকায় খনিজ তেল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাপক হারে তৈরি হচ্ছে বায়োডিজেল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও জৈব তেলের ব্যবহার বাড়ানোয় জোর দিয়েছেন। বিদেশ থেকে তেল আমদানির বদলে দেশেই জৈব তেলের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন।
