
মোদীর বড় ‘নকশা’ রয়েছে, রাজ্যগুলোকে ঠুঁটো করে দিতে চাইছে কেন্দ্র, বকেয়া জিএসটি প্রশ্নে চিদম্বরম
গতকাল বৃহস্পতিবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ছিল। সেখানে কেন্দ্রের রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডে জানিয়েছিলেন, জিএসটি-র জন্য রাজ্যগুলির মোট রাজস্ব ঘাটতি হওয়ার কথা ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনা অতিমহামারীর জন্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে ভগবানের মার আখ্যা দিয়ে বকেয়া জিএসটি প্রশ্নে যখন দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার, তখন রাজ্যগুলির ক্ষোভ উস্কে দিতে চাইলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
শুক্রবার রাতে টুইট করে চিদম্বরম বলেন, জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ বাবদ ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্র যে দুটো শর্ত দিয়েছে, তাতে পণ্য পরিষেবা আইনকেই লঙ্ঘন করা হচ্ছে। নিজেদের দায়িত্বই ঝেড়ে ফেলতে চাইছে দিল্লি। কিন্তু তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর কথায়, “রাজ্যগুলোকে আর্থিক ভাবে ঠুঁটো করে দেওয়ার বৃহত্তর নকশা রয়েছে মোদী সরকারের। যাতে টাকার জন্য কেন্দ্রের কাছে তারা ভিক্ষে চাইতে বাধ্য হয়।”
The two options given by the Modi government to the States to bridge the GST Compensation gap is a gross violation of the law and an abdication of the responsibility of the central government.
— P. Chidambaram (@PChidambaram_IN) August 28, 2020
গতকাল বৃহস্পতিবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ছিল। সেখানে কেন্দ্রের রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডে জানিয়েছিলেন, জিএসটি-র জন্য রাজ্যগুলির মোট রাজস্ব ঘাটতি হওয়ার কথা ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনা অতিমহামারীর জন্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, রাজ্যগুলিকে এখন দু’টি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যগুলিকে কম সুদে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হবে। ২০২২ সালের মধ্যে সেই ঋণ শোধ করতে হবে। সেস বসিয়ে ঋণশোধের অর্থ সংগ্রহ করবে রাজ্যগুলি। অথবা রাজ্যগুলি পুরো ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকাই ঋণ নিতে পারবে। কোন রাজ্য কত টাকা ঋণ নেবে, তা জানাতে হবে আগামী সাত দিনের মধ্যে।
কিন্তু চিদম্বরমের বক্তব্য, জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের পাওনা টাকা মেটানোর ব্যাপারে আইনি দায়বদ্ধতা রয়েছে কেন্দ্রের সরকারের। তা ভুলে গিয়ে এভাবে ঋণ নেওয়ার দিকে রাজ্যগুলিকে ঠেলে দিতে পারে না দিল্লি।
বকেয়া জিএসটি-র টাকা আদায়ের দাবিতে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাঞ্জাব—বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। এমনকি বিজেপি-সংযুক্ত জনতা শাসিত বিহার সরকারও এই দাবিতে সরব। পর্যবেক্ষকদের মতে, একই দাবি নিশ্চয়ই রয়েছে বিজেপি শাসিত সরকারগুলিরও। দল ও দিল্লির সরকার বিপাকে পড়বে বলে তারা প্রকাশ্যে বলতে পারছে না বা বলছে না। বস্তুত রাজ্যগুলির সেই উষ্মায় অক্সিজেন যোগাতে এদিন চিদম্বরম বলেন, “রাজ্যগুলির উচিত কেন্দ্রের দেওয়া দুটি বিকল্পই প্রত্যাখ্যান করা এবং কেন্দ্রকে বলা যে বকেয়া টাকা মেটানোর বন্দোবস্ত দিল্লিকেই করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি জানান, চলতি আর্থিক বছরে জিএসটি আদায় হবে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। একে ভগবানের মার আখ্যা দিয়ে নির্মলা বলেন, দেশে এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ছিল জিএসটি কাউন্সিলের ৪১ তম বৈঠক। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী জানান, জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালে দিয়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে গত মার্চে দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সেস আদায় হয়েছে মাত্র ৯৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা।
তবে বিরোধীদের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রীয় সরকার তার দায় এড়াতে পারে না। করোনার কারণে রাজ্যগুলি এমনিতেই অর্থ সংকটে পড়েছে। কেন্দ্র এখন হাত গুটিয়ে নিলে আরও বিপদে পড়বে রাজ্যগুলি। বরং কেন্দ্রই পারে আর্থিক সুরাহা দিতে এবং তা দিতেই হবে মোদী সরকারকে।