
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শিশুদের ক্ষেত্রে যতক্ষণ না শরীর স্পর্শ করা হবে ততক্ষণ সেটা যৌন নির্যাতন নয়| ১২ বছর বা তার কম বয়সের শিশুদের পোশাকের ওপর দিয়ে কোনও রকম স্পর্শ বা হেনস্থা করা হলে তা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেবিচত হবে না, পকসো আইনের একটি মামলার শুনানিতে এমনই রায় দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ| এই রায় নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে| এবার সেই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট|
শিশুদের পোশাকের ওপর দিয়ে যদি অন্যায় স্পর্শ করা হয়, তাদের হেনস্থা করা হয়, তাহলে কীভাবে সেটা যৌন নিগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হবে না, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল| বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের মহিলা বিচারপতি পুষ্প গানেদিওয়ালা তাঁর রায়ে বলেছিলেন, ‘স্কিন টু স্কিন কনট্যাক্ট’ না হলে সেটা যৌন নির্যাতন নয়, অর্থাৎ শিশুদের জামাকাপড় খুলিয়ে বা জামাকাপড়ের ভিতরে হাত গলিয়ে তাদের বুক বা গোপনাঙ্গ স্পর্শ না করা হলে সেটা যৌন নির্যাতন নয়। এমন ঘটনা পকসো আইনের পর্যায়ে পড়বে না|
তবে পাশাপাশি এই বিচারক মনে করিয়ে দিয়েছেন, নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য পেনিট্রেশন বা শিশুর শরীরে অঙ্গ প্রবেশ করতে হবে এমনটা নয়, যে কোনও যৌন-স্পর্শই নির্যাতন হিসেবে গৃহীত হবে, তবে তা পোশাকের উপর দিয়ে হলে নয়, ভিতর দিয়ে হলে তবেই। পকসো আইনে এমনটাই রয়েছে বলে রায় দেন তিনি।
এই রায় শুনে অনেকেই বিস্মিত ও বিরক্ত হয়েছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই তাদের অনবধানের সুযোগ নিয়ে পোশাকের ওপর দিয়ে বুকে হাত দেওয়া বা গোপনাঙ্গে ব্যথা দেওয়ার চেষ্টা– এসব ঘটে থাকে। সেগুলিও স্পষ্টতই যৌন নির্যাতন বলেই দাবি শিশুকল্যাণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের।
সম্প্রতি ১২ বছরের মেয়ের বুকে অন্যায় ভাবে স্পর্শ করা, চাপ দেওয়া ও তার জামাকাপড় খোলানোর চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত হন এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন এই বলে যে তিনি যৌন নির্যাতন করেননি মেয়েটির উপর। সেই মামলার শুনানিতেই এই কথা জানিয়েছে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ।
এমনিতে পকসো আইনের ৮ নম্বর ধারা মোতাবেক ওই অভিযুক্তের তিন বছর জেল হওয়ার কথা ছিল যৌন নির্যাতনের অভিযোগে। কিন্তু আইনের নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারপতি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৩৪২ নম্বর ধারা মোতাবেক ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন অভিযুক্তকে।
এই নতুন আইনি ব্যাখ্যায় এবং সাজা লঘু হওয়ার ঘটনায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে নানা মহলে। অনেকে দাবি করছেন, এর ফলে অনেকেই শিশুদের উপর নানা রকম অত্যাচার করে পার পেয়ে যাবেন, কেবল পোশাক না খোলার অজুহাতে। আবার পোশাক খুলে কিছু করা হয়নি, এই ভেবে অনেক অভিভাবকও পিছিয়ে যাবেন অভিযোগ দায়ের করতে। বম্বে হাইকোর্টের এই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহারাষ্ট্রের মহিলা কমিশনও| অন্যদিকে, জাতীয় শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশন মহারাষ্ট্র সরকারকে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করার আর্জিও জানিয়েছে|