
তিনখানা নুনের হ্রদ মঙ্গলে! ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে, খবর পাঠাল ‘মার্স এক্সপ্রেস’
লাল মাটির নিচে প্রায় ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘাপটি মেরে আছে লবণাক্ত জলের হ্রদ। জল আছে কি?
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক আধটা নয়। একেবারে তিন তিনখানা নুনের হ্রদ চাপা পড়ে আছে মঙ্গলের রুক্ষ পাথুরে মাটির নিচে। চতুর্থ হ্রদের খোঁজও মিলতে পারে অচিরেই। লাল মাটির নিচে প্রায় ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘাপটি মেরে আছে লবণাক্ত জলের হ্রদ। জল আছে কি?
লাল মাটির নিচে কঙ্গালসার হ্রদের ফসিল
মঙ্গলে নুনের পাহাড় দেখেছিল ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মার্স এক্সপ্রেস স্পেসক্র্যাফ্ট। গবেষকরা বলছেন, মাটির নিচে জল থাকার সম্ভাবনা প্রবল। আর জল মানেই প্রাণ। দুযে দুয়ে চার করা শুরু করে দিয়েছেন গবেষকরা। তবে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গবেষকদের মত, এই হ্রদগুলি একসময় নোনা জলে টইটম্বুর ছিল। জল শুকিয়ে যাওয়ার সময় নুনের পরত জমে তৈরি হয় পাহাড়। মঙ্গলের পাহাড়ি গেইল ক্রেটার এলাকা এভাবেই তৈরি। আমাদের মাউন্ট এভারেস্টের মতো লাল গ্রহের গেইল ক্রেটারে রয়েছে সুবিশাল পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট শার্প।

সেই ২০১৮ সাল থেকেই মঙ্গলে নোনা জলের হ্রদের খোঁজ করছিল মার্স এক্সপ্রেস। তবে গবেষকরা বলছেন ওই হ্রদগুলির জল এতটাই লবণাক্ত যে তাতে মাইক্রোবস জন্মানো সম্ভব কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে আগে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের গবেষক ডক্টর রবার্তো ওরোসেই বলেছেন, একসময় এই সুবিশাল হ্রদগুলিতে জল ছিল, তার প্রমাণ মিলেছে। হ্রদ সংলগ্ন পাহাড়ি খাঁজে জলের চিহ্ন দেখা গেছে। মাটির নিচে কঙ্কালসার হ্রদগুলি লবণাক্ত জলের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। ওরোসেই বলেছেন, মার্স এক্সপ্রেসের রেডার ডেটা বলছে, লাল মাটির নিচে এমন অনেক রহস্য চাপা পড়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে মার্স এক্সপ্রেসের মারসিস রেডার দেখিয়েছিল ২০ কিলোমিটার চওড়া হ্রদ চাপা পড়ে আছে মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুর দেড় কিলোমিটার গভীরে। তার উপরেই বরফ ও ধুলোর স্তর জমে আছে।
২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মারসিস রেডারের পাঠানো ছবিতে মঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া হ্রদের চিহ্ন দেখা গেছে। এইসব তথ্য জড়ো করেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, তিন থেকে চারটি সুবিশাল লবণাক্ত জলের হ্রদ চাপা পড়ে আছে মাটির তলায়। তবে প্রাণের হদিশ মিলবে কিনা সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। আরও গবেষণার পরেই সেটা বলা যাবে।
মঙ্গলের গেইল ক্রেটার আজও এক বিস্ময়
গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে মঙ্গলের বুকে গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড আর ধূমকেতুরা আছড়ে পড়ার ফলেই তৈরি হয়েছিল সেই গেইল ক্রেটার এলাকা। যা মূলত ছিল সুবিশাল গহ্বর। পরে জলের স্রোত এসে ভরিয়ে দেয় গহ্বর। পরে সেখান থেকেই তৈরি হয় মাউন্ট শার্প। এর পাদদেশে নীচু ভূমি বা গিরিখাত রয়েছে। পাথুড়ে জমি, দেখে মনে হবে শক্ত মাটিকে ভাঁজে ভাঁজে মুড়ে ফেলা হয়েছে। গেল ক্রেটারের উপর মাউন্ট শার্পও মঙ্গলের এক বিস্ময়। এর গঠন মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর সুউচ্চ পাহাড়শ্রেণীকে। ঠিক যেন পাহাড়ের পাদদেশে একটা হ্রদ রয়েছে, পাহাড়ের পাথুড়ে গা বেয়ে নেমে আসছে ঝর্না, চারপাশে ঘন হয়ে মেঘ জমেছে। এইসব কিছুই নেই, কিন্তু পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে যেন তার ছাপ রয়ে গেছে। জন্মলগ্নে কি তেমন কিছু ছিল মঙ্গলে, এই পাহাড় সেই রহস্যকেই উস্কে দেয়। গবেষকরা বলেন, লাল গ্রহের জন্মলগ্নের অনেক অজানা রহস্যের সমাধান হতে পারে এখান থেকেই।
মঙ্গলের ‘গ্রিনহেগ পেডিমেন্ট’ -এর প্রতিটি ধাপে ছড়িয়ে রয়েছে রহস্য। কোথাও প্রায় ৯৬ মাইল এলাকা জুড়ে হ্রদের মতো বিরাট এলাকা রয়েছে। এখানকার মাটির প্রকৃতি জানান দেয়, কখনও হয়ত বিশাল জলাশয় ছিল এই উপত্যকায়। কোনও অজানা কারণে পরে সেটা অদৃশ্য হয়। মঙ্গলে এক সময় ছিল বড় বড় নদী। কম করে ১৭ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের।‘লাল গ্রহে’র উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’র (Arabia Terra) সুবিস্তীর্ণ এলাকায় ওই সব বড় বড় নদীর ‘ফসিল’-এর হদিশ মিলেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’য় প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে বইত বড় বড় নদী। এখন শুধুই তার ফসিল পড়ে রয়েছে লাল গ্রহের মাটিতে।