
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মঙ্গলে নেমে দুরন্ত কাজ করছে নাসার পারসিভিয়ারেন্স। লাল মাটিতে হইহই করে টেস্ট ড্রাইভ সেরে ফেলল এর মধ্যেই।
পৃথিবীর মাটিতে গাড়ি চালানো আর মঙ্গলের পাথুরে লাল মাটিতে গড়গড়িয়ে চাকা গড়ানো তো এক কথা নয়। তার ওপর মঙ্গলের পরিমণ্ডলও অনেক আলাদা। দিন-রাতের হিসেব পৃথিবীর মতো নয়। তাপমাত্রাও হিমাঙ্কের নীচে। তাই সবদিক খতিয়ে দেখে, হিসেব কষেই লালা মাটিতে বেশ কিছুক্ষণ ছয় চাকা গড়িয়ে ঘুরে বেরিয়েছে রোভার পারসিভিয়ারেন্স।
News from Mars: @NASAPersevere's team has tested its robotic arm, checked science instruments, & taken the rover on its first drive. Mission scientists have named its touchdown site "Octavia E. Butler Landing," in honor of the late science fiction author: https://t.co/jcyr3ZZDGz pic.twitter.com/5xsQnxdjE3
— NASA (@NASA) March 5, 2021
লাল মাটিতে নামার পরে কিছুটা এদিক ওদিক ঘুরেছিল ঠিকই, তবে বেশি নয়। বৃহস্পতিবার সাহস নিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় মিটার (২১.৩ ফুট) ড্রাইভ করেছে রোভার। সময় লেগেছে ৩৩ মিনিট। লাল মাটিতে টায়ারের ছাপও ফেলেছে রোভার। সে ছবি ও ভিডিও সামনে এনেছে নাসা।
রুক্ষ পাথুরে মাটিতে কখনও সোজা পথে গেছে, আবার কখনও পাথুরে খাঁজ বেয়ে ১৫০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে বাঁ দিকে ঘুরেছে। আবার আড়াই মিটারের মতো পিছিয়েও এসেছে। কোনও যান্ত্রিক গলদ হয়নি। আগুপিছু করে, ডাইনে-বাঁয়ে বেঁকে দিব্যি মঙ্গলের মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোভার। ফটাফট ছবিও তুলছে।
"Our first drive went incredibly well. […] You can see the wheel tracks that we left on Mars. I don't think I've ever been happier to see wheel tracks, and I've seen a lot of them." — @NASAJPL's Anais Zarifian describes a milestone for @NASAPersevere. pic.twitter.com/gewrGoLsRa
— NASA (@NASA) March 5, 2021
নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির গবেষক অ্যানাইস জারিফিয়ান বলেছেন, নাসার ‘মিস কৌতুহল’ বা কিউরিওসিটিও এত দ্রুত চাকা গড়াতে পারেনি। পারসিভিয়ারেন্স সেখানে শুরুতেই বাজিমাত করে দিয়েছে। মঙ্গলের এক দিনে (মার্সিয়ান ডে) প্রায় ২০০ মিটার ড্রাইভ করার পরিকল্পনা আছে রোভারের। পৃথিবীর দিন-রাতের আয়ু যতটা, মঙ্গলের দিন-রাতের আয়ুও প্রায় ততটাই। পৃথিবী নিজের কক্ষপথে লাট্টুর মতো ঘুরতে যে সময় নেয় (২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট), তার চেয়ে সামান্য কিছুটা বেশি সময় নেয় লাল গ্রহ। ঘণ্টার হিসেবে তাই মঙ্গলের একটি দিন (দিন ও রাত মিলে) আমাদের চেয়ে সামান্য একটু বড়। তার দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট থেকে ২৪ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে। একে বলে ‘সল’।
এসইউভি গাড়ির সমান আয়তন, ওজনে প্রায় এক টন রোভারে ১৯টি ক্যামেরা বসানো আছে। দুটো মাইক্রোফোনও আছে, মঙ্গলের শব্দ ধরে পাঠাবে পৃথিবীতে। ফরাসি বিজ্ঞানীদের তৈরি একটি ক্যামেরা লাগানো আছে রোভারে যা প্রায় একটা জুতোর বাক্সের মতো বড়। হাই-ডেফিনিশন ছবি উঠবে তাতে। মঙ্গলের গিরিখাত, উপত্যকা, আগ্নেয় পাথর, মৃত নদীর ফসিলের ছবি তুলবে ওই ক্যামেরা। ৩০ রকমের পাথর ও মাটি খামচে আনার জন্য রোভারের আছে দৈত্যাকার যান্ত্রিক হাত (রোবোটিক আর্ম)। এর মধ্যেই নাকি সাত হাজার ছবি তুলে ফেলেছে পারসিভিয়ারেন্স।
নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলের আবহাওয়া কেমন সে নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। কখনও ধুলোর জড়, কখনও মাটি কাঁপিয়ে ভূমিকম্প আবার কখনও বরফ পড়ে মঙ্গলে। গ্রহের পৃষ্ঠদেশ বা সারফেসের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রতিদিনের তাপমাত্রা কখনও বেড়ে ১৫০ ডিগ্রি ছোঁয়।
রোভার এখন যে জায়গায় রয়েছে তার নাম জেজ়েরো ক্রেটার, ১৮.৩৮ ডিগ্রি উত্তর ও ৭৭.৫৮ ডিগ্রি পূর্বে অবস্থিত এই ক্রেটার। মনে করা হয় এই ক্রেটারের বয়স প্রায় ৩৫০ কোটি বছর। ক্রেটারের চারপাশের পাথুরে জমি, গিরিখাতের ছবি পাঠিয়েছে রোভার। ৪৯ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই গহ্বর বিরাট একটা বাটির মতো। এই ক্রেটারকে বলা হয় মঙ্গলের ডেল্টা। মনে করা হয় এখানে একসময় বড় বড় নদী বয়ে যেত। ক্রেটারের মাটিতেও জলের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। আর যেখানে জল, সেখানে প্রাণের জন্ম হওয়া স্বাভাবিক। কোটি কোটি বছর আগে যখন নদীরা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, তখন এখানে আনুবীক্ষণিক জীবদের জন্ম হয়েছিল বলেই মনে করা হয়। পারসিভিয়ারেন্স এই ক্রেটারে ঘুরে ঘুরেই সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণের খোঁজ করবে।