
মহাকাশে মুলো চাষ! নভশ্চরদের পুষ্টির জন্য টাটকা আনাজ ফলাচ্ছে নাসা
চাষ বললেই তো হল না, এ তো আর পৃথিবীর মাটি নয়। মহাকাশে যেখানে হাওয়া বাতাস কিচ্ছুটি নেই, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও নেই, সেখানে চাষ করা চাট্টিখানি কথা নয়। মাটি লাগবে, জল, সার, আলো সবই লাগবে। আর মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা শূন্য মাধ্যাকর্ষণে এমনিতেই ভেসে ভেসে থাকতে হয় নভশ্চরদের, সেখানে ফসল ফলানোর ঝক্কিও কম নয়।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পৃথিবীর কক্ষে বসে নজরদারি অনেক হল। এবার যখন খুশি চাঁদে নেমে নুড়ি-পাথর কুড়িয়ে আনতে হতে পারে। সেখানে বিশ্রামের জন্য পাকা ঘরও তোলা হবে। দরকার পড়লে মঙ্গলে ঢুঁ মেরে আসতে হতেও পারে। মোদ্দা কথা, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকার দিন শেষ। মহাকাশ চষে গ্রহ-তারাদের নিত্য নতুন খবর দিতে হবে নভশ্চরদের। তার জন্য শরীর ঠিক রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবারও খেতে হবে। সেই পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া বাসি খাবার চলবে না। একেবারে টাটকা ফল, আনাজ দিয়ে রান্নাবান্না হবে মহাকাশে। সে জন্য এখন চাষের কাজে মন দিয়েছে নাসা।
চাষ বললেই তো হল না, এ তো আর পৃথিবীর মাটি নয়। মহাকাশে যেখানে হাওয়া বাতাস কিচ্ছুটি নেই, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও নেই, সেখানে চাষ করা চাট্টিখানি কথা নয়। মাটি লাগবে, জল, সার, আলো সবই লাগবে। আর মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা শূন্য মাধ্যাকর্ষণে এমনিতেই ভেসে ভেসে থাকতে হয় নভশ্চরদের, সেখানে ফসল ফলানোর ঝক্কিও কম নয়। তবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা তথা নাসা এসব সমস্যাকে হেলায় উড়িয়ে দিয়েছে। সেই কবে থেকেই চাষবাস নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এতদিনে তার ফল মিলেছে। টাটকা ফসল ফলেছে মহাকাশেই। মুলোর বীজ দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। এখন কচি কচি পাতা বেরিয়েছে। ফলও ধরেছে।
পৃথিবীতে বসে সেই চাষের কাজ দেখভাল করছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার রয়েছে ফ্লোরিডায়। এই স্পেস সেন্টারের দায়িত্ব আধা নাসার, আধা ফ্লোরিডা সরকারের। নাসার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টার)অনেক কাজকর্মই এখান থেকে পরিচালনা করা হয়। মহাকাশে ফসল ফলানোর ব্যাপারটাও এখানকার বিজ্ঞানীরাই দেখছেন। প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডক্টর গ্যারি স্টুট খুব ব্যস্ত। মুলোর ফলনের দায়িত্ব অনেকটা তাঁরই। কেনেডি স্পেস সেন্টারের গবেষণাগারেও তিনি মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিবেশ বানিয়ে সেখানে চাষ করে পরীক্ষা করছিলেন। মহাকাশে ফসলের ফলন যাতে ভাল হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি।
হঠাৎ মুলো কেন? অন্য আনাজও তো ফলানো যেত? ডক্টর গ্যারি বলেছেন, আসলে মহাকাশে ফসল ফলানোর এটা প্রথম ধাপ। মাইক্রোগ্র্যাভিটি নিয়ে এখন অনেক গবেষণা হচ্ছে। কীভাবে শূন্য মাধ্যাকর্ষণের বাধা কাটিয়ে পৃথিবীর মতোই সুযোগ সুবিধা মহাকাশেও তৈরি করা যায় সে নিয়েই মূলত গবেষণা চলছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে। কী ধরনের আনাজ ফলবে সেটা তো প্রথমে বোঝা যায়নি। তাই মুলো দিয়েই সূচনাটা হয়েছে। কারণ মুলোর পুষ্টিগুণ আছে। তাছাড়া ফলনে সময় কম লাগে। খুব তাড়াতাড়ি ফল ধরবে এমন বীজই পোঁতা হয়েছিল। সেখানে সাফল্য এসেছে।
ডক্টর গ্যারি বলছেন, আগে পৃথিবী থেকে যাবতীয় রসদ বয়ে নিয়ে যেতে হত নভশ্চরদের। দীর্ঘ সময় থাকার জন্য খাবার পাঠানো হত। প্যাকেটবন্দি সে সব খাবারের পুষ্টিগুণ কিছু সময় পরেই ফুরিয়ে যায়। তাই যাতে পৃথিবী থেকে রসদ বয়ে নিয়ে যেতে না হয়, সে চেষ্টাই হচ্ছে। ফসল ফলাতে গেলে মাধ্যাকর্ষণের দরকার খুব একটা পড়ে না। গাছের শিকড় মাটির নিচ অবধি নামে। তাই অসুবিধা খুব একটা নেই। বিজ্ঞানী বললেন, লাল ও নীল কৃত্রিম আলোতে গাছের ফলন ভাল হয়েছে। বিশেষ রকম পাথুরে মাটিতে বীজ পোঁতা হয়েছিল। সার ও অন্যান্য উপকরণ তার মধ্যেই ছিল। চাষের কাজ ঠিক হচ্ছে কিনা দেখার জন্য ১৮০টি সেন্সর ও ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। সেসব তথ্য পাঠানো হচ্ছিল পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে।
ফসল ফলাবে, চাঁদ-মঙ্গলে ঘরও তুলবে নাসা
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সব কিছুই প্রায় ওজন শূন্য দশায় থাকে। সেখানে নীচে টেনে নামানোর ‘শক্তি’ অভিকর্ষ বলটাই নেই। যাকে বলে, ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’। ফলে, মহাকাশচারী সহ সব কিছুকেই ভেসে থাকতে হয় মহাকাশে। মহাকাশ স্টেশনে। এই মাইক্রোগ্র্যাভিটিকে চ্যালেঞ্জ করেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পরবর্তী প্রজেক্ট সিমেন্ট সলিডিফিকেশন। অর্থাৎ এই বিনা-অভিকর্ষজ বলের মধ্যেই সিমেন্টকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মিশিয়, জমিয়ে শক্ত করা। নাসার এই প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি ইনভেস্টিগেশন অব সিমেন্ট সলিডিফিকেশন (MICS)।’
সিমেন্টে মেশানে হয়েছে ট্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেট (C3S)। এটা সিমেন্টের অন্যতম উপাদান। এর সঙ্গে জল। প্রথমবার পৃথিবীর বাইরে জলকে ব্যবহার করে এত বড় কর্মকাণ্ড চলছে। এই সিমেন্ট দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। সেটা কীরকম?
প্রথমত-এই জমানো সিমেন্ট হবে বর্ম। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা এই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে তেজস্ক্রিয় রশ্মিরা আগেও হানা দিয়েছিল। সিমেন্টের বর্ম থাকলে যে কোনও মহাজাগতিক রশ্মির হাত থেকে মহাকাশচারীদের বাঁচানো যাবে। পাশাপাশি, তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকবে।
দ্বিতীয়ত-নাসার পরবর্তী মিশন চাঁদে ও মঙ্গলে মানুষ পাঠানো। এই মাইক্রোগ্র্যাভিটির সঙ্গে যুদ্ধে সিমেন্ট যদি জিতে যায়, তাহলে আগামী দিনে চাঁদে বাড়ি বানানোটা কোনও সমস্যারই হবে না। মঙ্গলেও মহাকাশচারীদের থাকার একটা হিল্লে হবে। তাহলে স্পেস স্টেশন থেকেই ছ’মাস অন্তর অন্তর মহাকাশচারীর একটা দল ঝট করে মঙ্গলে ঘুরে আসতে পারবেন। ভাঁড়ারেও টান পড়বে না, আবার খরচও বেশি হবে না।