
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মহাকাশে প্রাণের খোঁজ করতে গিয়ে বারে বারেই অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই হয়তো পৃথিবীর মতোই নীল গ্রহের খোঁজ মিলল। আবার এমন গ্রহ দেখা গেল যার পিঠ থেকে ভসভস করে উঠে আসছে জলের ধোঁয়া। অতএব ভিন গ্রহেও যে প্রাণ থাকতে পারে তা একপ্রকার নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা। অপেক্ষা শুধু হাতে নাতে প্রমাণের। দিনকয়েক আগে বিজ্ঞানীদের একটি খোঁজ রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে। আমাদের সৌরমণ্ডলে ছায়াপথেই আছে নাকি এমন গ্রহ যাদের ভেতরে জল থৈ থৈ করছে। তরল জলে টইটম্বুর সমুদ্রও আছে। তবে হ্যাঁ সেই জল সবসময় তরল অবস্থায় থাকে নাকি গরম হয়ে বাষ্প হয়ে যায়, সেটা সঠিকভাবে বোঝা যায়নি এখনও। তবে জল যে আছে তার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেখানেই দুয়ে দুয়ে চার হয়েছে। জল আছে মানে প্রাণ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।
কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির গ্লোব ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের এই নতুন খোঁজ নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে। এমনিতেও চার হাজারের বেশি ভিনগ্রহ আবিষ্কার হয়েছে এ যাবৎ। গত শতাব্দীর নয়ের দশক থেকে আজ পর্যন্ত ২৭/২৮ বছরে প্রায় চার হাজার ভিন গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর আগে কোনও ভিন গ্রহেই একই সঙ্গে তরল জল ও বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি আর সেই গ্রহটিকে তার নক্ষত্রমণ্ডলের হ্যাবিটেব্ল জোনে থাকতে দেখা যায়নি। তবে এখন বিজ্ঞানীরা বেশ বুঝতে পারছেন, আমাদের চেনাশোনা ছায়াপথেই পৃথিবীর মতো এমন অনেক গ্রহ ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে যেখানে প্রাণের বাসযোগ্য পরিবেশ রয়েছে।
‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে এই গবেষণার খবর সামনে এনেছেন গ্লোব ইনস্টিটিউটের মহাকাশবিজ্ঞানীরা। গবেষক অ্যান্ডার্স জোহানসেন কম্পিউটার মডেলে দেখিয়েছেন, প্রায় ৪০০-৪৫০ বছর আগে পৃথিবীর মতো এমন অজস্র গ্রহ তৈরি হয়েছিল। পৃথিবী, মঙ্গল ও শুক্রগ্রহের মতো যাদের উপাদান পাথুরে কণা, বরফ ও কার্বন। এমন হতেই পারে হিমশীতল বরফে তৈরি কোনও ধূমকেতুর ধাক্কায় এইসব গ্রহে জলের কণা থেকে গেছে। কোনও তারামণ্ডলে কোনও গ্রহ তার নক্ষত্রটি থেকে দূরত্বের নিরিখে গোল্ডিলক্স বা হ্যাবিটেব্ল জোনে থাকলে তার তাপমাত্রা এমন হতে পারে যাতে সেই পাথুরে গ্রহটির পিঠেও তরল জলের ধারা বইতে পারে অনায়াসে।
আরও পড়ুন: তিনখানা নুনের হ্রদ মঙ্গলে! ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে, খবর পাঠাল ‘মার্স এক্সপ্রেস’
আসলে এই ব্রহ্মাণ্ডে নানা জাতের, নানা গোত্রের গ্রহ আছে। কেউ পৃথিবীর মতো, কেউ পৃথিবীর চেয়ে ছোট ‘সাব-আর্থ’ আবার কেউ পৃথিবীর চেয়ে বড় ‘সুপার আর্থ।’ এই সুপার আর্থগুলিতে জল ও কার্বন থাকার সম্ভাবনা বেশি। সুপার আর্থদের তাপমাত্রাও হয় অনেকটা পৃথিবীর মতোই। অর্থাৎ হ্যাবিটেবল জ়োন বা প্রাণের বাসযোগ্য পরিবেশ রয়েছে। খান পঞ্চাশেক এমন গ্রহের খোঁজ মিলেছে যাদের নিয়ে এখন নাড়াচাড়া করছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর যমজও বেরিয়ে পড়েছে এই ফাঁকে, এক্সোপ্ল্যানেট ‘টিওআই ৭০০ ডি’। নীলপানা গ্রহ ঠিক যেন নতুন পৃথিবী। এখনও পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি গ্রহ, বামন গ্রহ ও উপগ্রহের খোঁজ মিলেছে যাদের সঙ্গে পৃথিবীর বিস্তর মিল। এই গ্রহগুলির মধ্যে কেপলার-৪৫২বি-ই আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর মতো, জল থাকার সম্ভাবনা প্রভূত বেশি।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ খবর দিয়েছে আমাদের পৃথিবী থেকে ৮৮০ আলোকবর্ষ দূরে এক নক্ষত্রের পরিবার আছে যার নাম ডব্লিউএএসপি-১২১। এই ঠিকানায় এমন এক ভিন গ্রহ আছে যেখানে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল আছে। গ্রহের নাম ডব্লিউএএসপি-১২১-বি। এ গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ট্রোপোস্ফিয়ার আছে, তার উপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার আছে। সেখানে আবার জলীয় বাষ্পও জমে আছে। মহাজাগতিক বিকিরণ এ গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে ছিঁড়েখুঁড়ে দিতে পারেনি। পুরু হয়ে জড়িয়ে আছে গ্রহকে। তার মানে কি চুপিচুপি প্রাণের জন্ম হয়েছে গ্রহের গর্ভে? আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।