
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের উদ্যোগে তৈরি মহামেডানের ফ্যানস ক্লাব, সৌমিককে বরণ করা হবে সাদা-কালো তাঁবুতে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক উদ্যোগ নিয়েছিলেন মহামেডান স্পোর্টিংয়ের ফ্যানস ক্লাব তৈরি হোক। সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ১১ বছর আগে। ২০২০ সালের অগস্টে তা শুধু পরিণতি পেয়েছে তা-ই নয়, উদ্যোগী ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে রবিবার মহামেডান ক্লাব তাঁবুতে সাদরে বরণও করে নেবেন সাদা-কালো সমর্থকদের ফ্যান ফোরাম ব্ল্যাক প্যান্থার্স।
আজ থেকে ঠিক ১১ বছর আগের কথা। ২০০৯ সাল। বেহালার আপাদমস্তক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সৌমিক দাশগুপ্ত উদ্যোগ নিয়েছিলেন, লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মতো সাদা-কালো সমর্থকরাও সংগঠিত হোন। যাতে তাঁরা অন্তত ভালমন্দ নিয়ে ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন। টিমের ভালর জন্য একটা চাপ তৈরি করার মঞ্চ থাকে। সার্বিক ভাবে টিমের উন্নতিতে কাজে লাগে এমন একটা ফোরাম তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সৌমিক। আজ তা বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
মহামেডানের নতুন কর্মসমিতি তৈরি হয়েছে। রবিবার নতুন কর্তাদের সংবর্ধনা দেবে ব্ল্যাক প্যান্থার্স নামের এই ফ্যান ফোরাম। সেই অনুষ্ঠানেই কার্ড ছাপিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৪২ বছরের সৌমিককে। সেই কার্ডে লেখা হয়েছে, “আগামী প্রজন্মের রোল মডেল হিসেবে আপনাকে বরণ করে নেব।”
এই আমন্ত্রণে আপ্লুত সৌমিকও। তিনি দ্য ওয়াল-কে বলেন, “২০০৯ সালে আমি তখন চাকরি সূত্রে কটকে থাকতাম। সেই সময়ে এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম ময়দানের তৃতীয় শক্তি মহামেডান স্পোর্টিং মাথা তুলে দাঁড়াক। তাদের সমর্থকরা সংগঠিত হোন।”
তথাকথিত ইসলাম ধর্মালম্বী না হলেও তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে সৌমিকের বক্তব্য, “ধর্মের নাম ফুটবল। ধর্মের নাম বন্ধুত্ব, ধর্মের নাম ভ্রাতৃত্ব, ধর্মের নাম টিম।” কলকাতা ময়দানের পোড় খাওয়া অনেকের মতেই, মূলত ইসলাম ধর্মালম্বীরা মহামেডান স্পোর্টিংয়ের সমর্থক হলেও বারবার সেই ধর্মের বেড়াজাল ছিঁড়ে গিয়েছে। ‘৮০ সালে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়দের ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে সাদা-কালো শিবিরে সই করা, পরের বছর অর্থাৎ ’৮১ সালে সুরজিৎ ইস্টবেঙ্গল ফিরলেও মোহনবাগান থেকে প্রসূন-বিদেশ-মানসের সাদা-কালো শিবিরে যোগদান বহু ইস্ট-মোহন সমর্থককেও সাদা-কালো গ্যালারিমুখী করেছিল। তা ছাড়া ওই ’৮১ সালেই শেষবার ঘরোয়া লিগ ঘরে তুলেছিল মহামেডান স্পোর্টিং। ভুলে গেলে চলবে না, নতুন কর্মসমিতিতেও ফুটবলসচিব হিসেবে রয়েছেন দীপেন্দু বিশ্বাস।
লাল-হলুদ সমর্থক সৌমিকের এই উদ্যোগের কথা শুনে হাওড়ার কট্টর মোহনবাগান সমর্থক অরুণাভ কর বলেন, “বর্তমান সময়ে যখন চারিদিকে একটা বিভেদের বাতাবরণ চলছে তখন এমন একটি ঘটনা সত্যিই কলকাতা ময়দানের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। ধর্মীয় বিভেদের কালো ছায়া যাতে কখনও খেলার মাঠে না পড়ে তা প্রত্যেক ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের চাওয়া। এই সময়ে এই ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ।”