
অশোক মালহোত্রা
স্টেশনের সামনে এসে ট্রেন মিস করলে যা হয়, খেলা শেষে তাই হল চেন্নাই সুপার কিংসের। না হলে অনেকটা লড়েও হার মাত্র সাত রানে।
হায়দরাবাদ দলের ডাগআউটে দেখলাম তৃপ্তির মুখ নিয়ে বসে রয়েছেন কিংবদন্তি স্পিনার মুথাইয়া মুরলীধরন। ওঁর খুশি হওয়ারই কথা, কারণ মুরলী দলের স্পিন কোচ, তিনি এমনভাবে রশিদ খান, আবদুল সামাদদের প্রস্তুত করেছেন, তাদের জুজুতেই চেন্নাই ইনিংস বহুক্ষণ আটকে থেকেছে, না হলে একটা সময় ইনিংসে মোট ১৩টি বল ডট খেয়েছে চেন্নাই।
হায়দরাবাদের স্পিনাররা হয়তো উইকেট পায়নি তেমন, কিন্তু বোলিং আঁটোসাটো করে চেন্নাইকে রুখে দিয়েছে। এমনকি স্পিনারদের ওপর যে ক্যাপ্টেন ওয়ার্নারের ভরসা রয়েছে, তা প্রমাণও করল সামাদ। শেষমেশ সাত রান দূরে থমকে গেল ধোনিরা।
ধোনি ও জাদেজা দুইজনই শেষদিকে চালাল ঠিকই, কিন্তু তখন দেরি হয়ে গিয়েছে। পরের দিকে তাদের ব্যাটিং লাইনআপে ছিল ব্র্যাভো, স্যাম কুরান, শার্দুল ঠাকুররা। তারপরেও স্পিনকে দেখে খেলতে গিয়ে ইনিংস মন্থর করে ফেলেছে দু’জনই। তাতে স্ট্রাইকরেট বেড়ে গিয়েছে।
জাদেজা আউট হল শেষমেশ টাইম প্রেসারে পরেই, ৩৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেছে ঠিকই, কিন্তু ইনিংসের মাঝে তার ৮টি ডট বল ফারাক গড়ে দিল। জাদেজার ইনিংসে রয়েছে ৫টি চার ও দুটি ছয়। ধোনি অপরাজিত থাকল ৩৬ বলে ৪৭ রান করে।
চেন্নাই ওপেনে শুক্রবার ডু প্লেসিকে এনে চমক দিয়েছিল, কিন্তু ফর্মে থাকা প্লেসি করল ১৯ বলে ২২ রান। ওয়াটসন কবে রান করবে, কেউ জানে না, এদিনও ব্যর্থ। রায়াডু দুই ম্যাচ পরে ফিরল ঠিকই, কিন্তু পুরনো ছন্দে ফিরতে পারেনি।
এম এস ধোনিকে দেখে মন ভরল না। যে ধোনি একদা ছিল ম্যাচ উইনার, সে একটা শটকেও দারুণ সংযোগ করতে ব্যর্থ। টাইমিংয়ে গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। যেগুলি ঠিকঠাক হয়েছে, তা অভিজ্ঞতার জন্যই, না হলে সেরা ফর্ম থেকে দূরে রয়েছে। ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচে নামলেও সেই ছন্দ ফেরেনি।
৪২ রানে চার উইকেট পড়ে গিয়েছে চেন্নাইয়ের নয় ওভারের মধ্যে। তারপর ধোনি ও জাদেজা মিলে ঝুঁকি নিলে ম্যাচটি বেরিয়ে যায়। টোয়েন্টি ২০ ক্রিকেটে বল নষ্ট করা বিলাসিতা, বিগ শট দরকার নেই, স্কোরবোর্ড সচল রাখতে স্ট্রাইক রোটেড করতে হবে, এটা বুঝতে হবে।
সানরাইজার্স দলের দুই সম্পদ হল প্রিয়ম গর্গ ও অভিষেক শর্মা। দুটি ছেলেই দারুণ উন্নতি করেছে। আমার তো মনে হয় হায়দরাবাদ দলটিকে টানবে এই দুই তরুণ। ৬৯ রানে চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল হায়দরাবাদের। প্রায় ১১ ওভার খেলা হয়ে গিয়েছে।
সেই অবস্থা থেকে চারমিনার সিটির দলকে টানল গর্গ। মিরাটের ১৯ বছরের ছেলেটির ব্যাটে জাদু আছে, কী সৃজণশীলতা রয়েছে, ২৬ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলেছে, যার মধ্যে রয়েছে ছয়টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা। অভিষেকের সঙ্গে জুটি বেঁধে গর্গ দলকে টেনেছে, অভিষেকের ৩১ রান এসেছে ২৪ বলে, মেরেছে চারটি বাউন্ডারি ও একটি ছয়।
ডেভিড ওয়ার্নার (২৯ বলে ২৮) শুরুটা খুব ভাল করেছে বলব না, তবে ফর্মে থাকা বেয়ারস্টো শূন্য রানে ফিরে যাওয়ার কারণে ওয়ার্নারও একটু ধীরে খেলছিল। মনীশ পান্ডে (২১ বলে ২৯) তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে চলে গিয়েছে।
এই হায়দরাবাদ দলের ফিল্ডিংও দারুণ। একটা দল চনমন করে যদি ক্যাপ্টেন ছটফট করে, সেটাই দেখাল ওয়ার্নার। কেদার যাদবের যে ক্যাচটি ওয়ার্নার নিল, এককথায় অপূর্ব। এমনকি ডু প্লেসির রান আউট যেভাবে করল গর্গ, তাতে ম্যাচের নায়ক প্রকৃত অর্থেই ওই।
হায়দরাবাদ যেমনভাবে দলটিকে সাজিয়ে নিয়েছে, চেন্নাই সেদিক থেকে প্রথম একাদশ সাজিয়ে উঠতে পারেননি। না হলে এই খেলায় তিনটি বদল করেছে, ভালই বদল, তবে ওই ক্রিকেটারগুলিকেও সিস্টেমের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। মুরলি বিজয়, জর্জ হ্যাজেলউড, ঋতুরাজ গায়কোয়াডকে বাদ দিয়ে ডোয়েন ব্র্যাভো, শার্দুল ঠাকুরকে খেলিয়েছে। ফিরে এসেছে রায়াডু।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০ ওভারে ১৬৪/৫। প্রিয়ম গর্গ ৫১, অভিষেক শর্মা ৩১, মনীশ পান্ডে ২৯, ডেভিড ওয়ার্নার ২৮, দীপক চাহার ২/৩১।
চেন্নাই সুপার কিংস : ২০ ওভারে ১৫৭/৫ । জাদেজা ৫০, ধোনি ৪৭ নঃ আঃ, নটরাজন ২/৪৩।
হায়দরাবাদ জয়ী সাত রানে।