
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বেআইনি কয়লা পাচার কাণ্ডের সূত্র ধরে রবিবার দুপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। তা নিয়ে যখন হই হই পড়ে গিয়েছে, তখন এ ব্যাপারে নিজেই মুখ খুললেন যুব তৃণমূল সভাপতি।
এদিন বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ টুইট করেছেন অভিষেক। তাতে তিনি লিখেছেন, “আজ দুপুর ২ টোয়, আমার স্ত্রীর নামে সিবিআই একটি নোটিস পাঠিয়েছে। দেশের আইনি ব্যবস্থার উপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। তবে ওরা যদি ভাবে এ সব করে আমাদের ভয় পাইয়ে দেবে, তা হলে ভুল ভাবছে। আমরা দমে যাওয়ার পাত্র নই।”
আর কদিন বাদেই বিধানসভা ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা হওয়ার কথা। তবে এর অনেক আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা সমাবেশে অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সিবিআই-ইডি সহ কেন্দ্রের বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছে। আমলা, অফিসার, নেতাদের ভয় দেখাচ্ছে। তবে এ ভাবে তৃণমূলকে আটকানো যাবে না। অর্থাৎ সিবিআই তদন্ত নিয়ে রক্ষণাত্মক না হয়ে পাল্টা আক্রমণের অবস্থানই নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে অবস্থান নিয়েছেন তা দিদির অবস্থানের ভিন্ন নয় বলেই পর্যবেক্ষকদের অনেকের মত।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সিবিআইয়ের নোটিস মোতাবেক রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এজেন্সির গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন? তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন ও তদন্তে সহযোগিতা করবেন? নাকি তিনি আইনি পথে হাঁটবেন।
বেআইনি কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে ইতিমধ্যে অনুপ মাঝি ওরফে লালা এবং যুব তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। লালা ও বিনয় দুজনেই ফেরার। এর মধ্যে লালা আবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। তার বক্তব্য, রাজ্যের অনুমতি না নিয়ে তাকে জেরা করা বা গ্রেফতার করার আদৌ কোনও এক্তিয়ার রয়েছে কিনা।
দিল্লি পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী সিবিআই গঠন করা হয়েছিল। কোনও রাজ্যে সিবিআই তদন্তে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। সাধারণত, অধিকাংশ রাজ্য সিবিআইকে সেই অনুমতি দিয়ে রাখে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার কনসেন্ট তথা অনুমতি প্রত্যাহার করে রেখেছে। ফলে এ ক্ষেত্রেও বিষয়টি আদালতে গড়ায় কিনা সেই কৌতূহল থাকল।
এদিকে বেআইনি পাচার কাণ্ডে সিবিআই অভিষেক পত্নীকে নোটিস পাঠানোর পর রাজ্যের তামাম বিরোধী দল কার্যত কেন্দ্রীয় এজেন্সির পদক্ষেপকে সমর্থনই করেছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, “আমি এর মধ্যে অবাক হওয়ার মতো দেখছি না। কারণ, বাংলায় এটা সবাই জানে কয়লা পাচার, গরু পাচার, বালি পাচারের সঙ্গে সরকারি দল তৃণমূলের বিশাল একটা অংশ জড়িত রয়েছে। তৃণমূলের নেতা নেত্রী সহ এরকম বহু লোক জড়িত, প্রশাসনের বড় বড় কর্তা ব্যক্তি জড়িত। ফলে সিবিআই এরকম নোটিস পাঠাতেই পারে”।
আবার বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “বেআইনি কয়লা পাচার কাণ্ডে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ‘কান’ ধরপাকড় করা হয়েছে। আর কান টানলে তো মাথা আসারই কথা। কাজেই সঠিক মাথার কাছেই সিবিআই পৌঁছেছে। এখন দেখা যাক, সেটা টানলে আরও কি বেরিয়ে পড়ে!”
অন্যদিকে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “বেআইনি কয়লা, বালি পাচার নিয়ে বামেরা বহুদিন ধরে অভিযোগ করছে। সবার আগে বামেরাই এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই তদন্ত অনেক আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। তা হলে দেশের সম্পদ চুরি বহু আগে বন্ধ করা যেত।”