
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিমল গুরুংয়ের হঠাৎ কলকাতায় আসা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাওয়ার ঘোষণা এবং ঘটা করে তৃণমূলের স্বাগত জানানো নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন দার্জিলিংয়ে নিহত পুলিশকর্মী অমিতাভ মালিকের বাবা তপন মালিক। সরাসরি বললেন, “বিমল গুরুংকে এনকাউন্টার করতে হবে। বিমল গুরুংয়ের ফাঁসি চাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা তিনি পূরণ করুন।”
প্রসঙ্গত বিমল গুরুংকে ধরার অপারেশনে গিয়েই প্রাণ গিয়েছিল অমিতাভ মালিকের। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা তরুণ এই পুলিশকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল রাজ্যে। এমনকি পুলিশও এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাকে ধরতে অপারেশন চালিয়েছিল সিকিমে। পাহাড় ঘেরা নামচিতে চলেছিল রোমহর্ষক অভিযান।
অমিতাভ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন বিমল গুরুং। যদিও ২০১৮ সালে যে চার্জশিট পেশ হয় তাতে বিমল গুরুংয়ের নাম ছিল না। তা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ সহ একাধিক ধারায় মামলা রয়েছে। সেই তিনিই বুধবার কলকাতায় এসে সল্টলেক থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ঘুরে বেরিয়েছেন, ললিত গ্রেট ইস্টার্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, যাঁকে একটা সময় পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেছিল, ভিন রাজ্যে অপারেশন চালিয়েছিল ধরার জন্য, প্রশাসনের খাতায় ফেরার থাকা সেই তিনিই কলকাতায় এসে বুক বাজিয়ে এত কথা বলছেন, অথচ পুলিশ কিছু বলছে না?
এদিন কার্যত একই কথা বললেন শহিদ পুলিশকর্মীর বাবা। পাশের টেবিলে রাখা ছেলের উর্দি পরা ছবি। মধ্যমগ্রামের বাড়িতে বসে অমিতাভর বাবা বলেন, “এখন দেখে মনে হচ্ছে, আমার ছেলেরই শুধু মেরুদণ্ড রয়েছে। বাকি পুলিশের মেরুদণ্ড বলে কিছু নেই। আর ওরা আমার ছেলের সেই মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিতে চেয়েছিল।”
বিমল গুরুংয়ের হদিশ পাওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার না করে শাসকদলের স্বাগত জানানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ মা গঙ্গা মালিকও। তিনি বলেন, মানুষই দেখুক! তপনবাবু বলেন, “আমায় অনেক ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদ আমি থামাব না। ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আমি একবার দার্জিলিঙে গিয়েছিলাম আমার ছেলের হত্যার তদন্তের বিষয়ে জানতে। ফেরার পরের দিন আমার বাড়ির সামনে তিনটি কুকুরের বাচ্চার গলার নলি কেটে ফেলে রাখা হয়েছিল। তার মানে কী? কী বোঝাতে চেয়েছিল? এটাই কি বোঝাতে চেয়েছিল যে, আমি মুখ খুললে আমার, আমার স্ত্রীর এবং ছোট ছেলের গলার নলি কেটে ফেলে দেবে?” তাঁর কথায়, “আমি আর ভয় পাই না। আমার ছোট ছেলেকে পুলিশ বিভাগ অস্থায়ী চাকরি দিয়েছে। আমি চাই ছোট ছেলেও প্রতিবাদ করুক। তাতে ওর চাকরি যায় যাবে।”
অমিতাভর বাবা আরও বলেন, “আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল সরকার। চাইলে ফিরিয়ে দেব, কিন্তু বিমল গুরুঙকে আমার সামনে এনকাউন্টার করতে হবে। যে বাপ-মা সন্তান হারায় কেবল তাঁরাই বোঝে এ যন্ত্রণা কী জিনিস!”
অনেকে বলেন, অমিতাভ হত্যার পর কার্যত তাঁর বাড়ির সামনে অদৃশ্য বলয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। যাতে তাঁর পরিবারের লোক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে না পারেন। তবে পঞ্চমীর বিকেলে গুরুংয়ের হঠাৎ গোর্খা ভবনে আবির্ভাব হওয়া এবং সাংবাদিক বৈঠকের পর শহিদ এসআইয়ের বাবা-মা যে ভাবে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তাতে অস্বস্তিতে শাসকদলও। এ নিয়ে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।