
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দলের মধ্যে সমন্বয়ের যে কোথাও একটা অভাব হচ্ছিল তা হেস্টিংসে বা মুরলী ধর সেন লেনে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল। এক মাসও বাকি নেই ভোট ঘোষণা হতে, তার আগে যে ছবিটা একেবারেই বেমানান।
অবশেষে দিল্লির হস্তক্ষেপ। শুক্রবার তাঁর বাসভবনে বাংলার নেতাদের বৈঠকে ডেকে অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সমন্বয়ের যেন কোনও অভাব না হয়। আট জনের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। যে কমিটিতে উল্লেখযোগ্য ভাবেই রাখা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। কমিটির মাথায় রয়েছেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। সেই সঙ্গে থাকছেন অমিত শাহ, শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় এবং অমিতাভ চক্রবর্তী।
সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রথমে মুখ খুলেছিলেন মুকুল রায়ই। দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তিনি। কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, ভোটে তাঁর প্রায় কোনও দায়িত্বই নেই। সপ্তাহ খানেক আগে সঙ্ঘ পরিবারের এক নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তাঁকেও গড় গড় করে তিনি বলে গিয়েছিলেন, কোথায় ত্রুটি, কী অসুবিধা হচ্ছে।
এর পরই মুকুল রায়ের সোজা ফোন যায় অমিত শাহর কাছে। ১৫ তারিখ সাক্ষাতের সময় চান। ঘনিষ্ঠদের বলেন, এ বার গিয়ে হেস্তনেস্ত করব। আবার খুব যাঁরা কাছের তাঁদের কথায় কথায় এও বলেন, ওদিক থেকে কিন্তু এখনও ফোন করছে। ও পথ মাড়ানোর প্রশ্ন নেই, সেটা ভিন্ন কথা।

এর পর হঠাৎই ১৪ তারিখ অমিত শাহর অফিস থেকে কলকাতায় ফোন আসে। বলা হয়, মিটিং যখন হবে তখন সবাইকে নিয়েই হোক। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, পর্যবেক্ষক শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী- সহ সবাইকেই ডাকা হয়।
কারণ, দিল্লিও জানত উপসর্গ কী কী। অনেকে যেমন অভিযোগ করছিলেন, বাংলা বিজেপি দ্বীপপুঞ্জের মতো। শিবপ্রকাশ-দিলীপ ঘোষদের নিয়ে একটা দ্বীপ, আবার কৈলাস, মুকুল রায়দের নিয়ে একটা দ্বীপ। ওদিকে স্বপন দাশগুপ্ত, শিশির বাজোরিয়া, রন্তিদেব সেনগুপ্তরা আবার একটা দ্বীপের মতো। একই ভাবে প্রদীপ জোশি-অমিতাভ চক্রবর্তীরা কাছাকাছি থেকেও আবার একটা দ্বীপের মতো।
সে যাক। ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক হবে। সকালে শাহ-র অফিস থেকে খোঁজ নেওয়া হয়, শুভেন্দু অধিকারীকে ডাকা হয়েছে তো? তখন আবার এর ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি। দলের এক সাধারণ সম্পাদক জানান, দুপুর ১ টায় ফোন করা হয়েছিল শুভেন্দুকে। কিন্তু বিকেলের ফ্লাইট ধরে সন্ধের মধ্যে দিল্লিতে অমিত শাহর বাড়িতে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। তার পর সন্ধের বৈঠকে অমিত-বাণী যা যা হতে পারে।
বিজেপি শীর্ষ সূত্রের মতে, এই কমিটির সদস্যরা নিয়মিত বৈঠক করবেন। অবধারিত ভাবেই সব মিটিংয়ে নাড্ডা ও অমিত শাহ থাকবেন না। কিন্তু তাঁদের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাতে হবে।
শুক্রবার অমিত শাহর বাসভবনে ওই বৈঠকের পর আজ রবিবার সকাল থেকে কলকাতার আইসিসিআরে রাজ্য সংগঠনের বৈঠক বসছে। দলের উপরের সারির সব নেতা পর্যবেক্ষক সবারই সেখানে উপস্থিত থাকার কথা। শুভেন্দুকেও ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। দিল্লির টনিকে কতটা কাজ হয়েছে, সমন্বয় বাড়ছে কিনা, দূরত্ব কমছে কিনা—অনেকের মতে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে এদিন থেকেই।