
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উনিশের লোকসভার পর তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “এবারের ভোটটা টোটাল হিন্দু-মুসলমান হয়েছে।”
একুশের আগে ‘বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের’ পাল্টা হিসেবে কি তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালি-অবাঙালি ‘প্রাদেশিকতা’কে অস্ত্র করতে চইছে?
বাংলাকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। উত্তর ও পশ্চিম ভারত থেকে উঠে আসা একাধিক সর্বভারতীয় নেতাকে বাংলার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিজেপিকে আক্রমণ করছিলেন শশী পাঁজা, সুখেন্দুশেখর রায়রা। শুক্রবার তাতে আরও মাত্রা বাড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
সরাসরি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জুড়ে দিলেন ব্রাত্য। এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “যে ভাবে অবাঙালিদের দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে কোণঠাসা করা হয়েছিল, সেই একইভাবে উত্তর, পশ্চিম ভারত থেকে লোক পাঠানো হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।”
এখানেই থামেননি দক্ষিণ দমদমের বিধায়ক। নেতাজি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসাকেও এক ব্র্যাকেটে ফেলেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, “এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সুভাষ বসুর মতোই আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেছেন। যার নাম তৃণমূল কংগ্রেস।” যদিও নাট্যকার মন্ত্রী বলেছেন, তিনি মোটেও নেতাজির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করছেন না। উদাহরণ দিচ্ছেন মাত্র।
ব্রাত্য আরও কিছু প্রশ্ন তোলেন এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে। যার সবটাই বাঙালি-অবাঙালিতেই আবর্তিত হয়েছে। কেন আরএসএসের সরসঙ্ঘ চালক পদে বাঙালি বসেননি, কেন অযোধ্যায় রামমন্দির তল্লাটে অসংখ্য মন্দির থাকলেও মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রাণ পুরুষ হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির নেই ইত্যাদি প্রভৃতি।
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বাঙালিকে তাঁর ক্যাবিনেটে রাখতে চলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁর নাম অরুণ মজুমদার। এ ব্যাপারে ব্রাত্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাঙালি তথা বাংলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে গত ১০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন। বিশ্ববাংলার ধারণা তিনিই এনেছেন।” তাঁর কথায়, “জো বাইডেন বাঙালি ও বাঙালিয়ানার মাহাত্ম বোঝেন কিন্তু দিল্লি বোঝে না,কেন্দ্রীয় সরকার বোঝে না, নরেন্দ্র মোদী বোঝেন না।”
তবে ব্রাত্য বসু বলেছেন ‘আমরা বাঙালি’ জাতীয় কোনও সংকীর্ণতা তাঁদের মধ্যে নেই। আন্তর্জাতিকতাবাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তাঁরা একথা বলছেন।
গত কয়েকদিন ধরেই বহিরাগত ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল। এ ব্যাপারে আগেই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় প্র্তিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “আমরা কেউ চিন বা পাকিস্তান থেকে আসিনি। তৃণমূল মূর্খের মতো কথা বলছে।” এদিনও প্রায় একই কথা বলেছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল ভয় পাচ্ছে বলেই বাংলার রাজনীতিতে প্রাদেশিকতার তাস খেলতে চাইছে।