
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইদানীং বিজেপির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রচারে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা সমগ্র শাসক দল। মূল বক্তব্য একটাই, বিজেপি বহিরাগত দল। বাংলার পার্টি নয়। সুতরাং বিজেপিকে ভোট নয়।
তৃণমূলের সেই সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন দিলীপ ঘোষরা। কখনও বলেছেন, “এই প্রশান্ত কিশোর ঘুরে ঘুরে তৃণমূলের ফুটো ফাটা সারাই করতে নেমেছেন, উনি কোথাকার লোক!” আবার কখনও বলেছেন, বাঙালিয়ানা নিয়ে যখন এতই গর্ব তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর না করে শাহরুখ খানকে কেন করেছিলেন দিদি!
কিন্তু মুখে সে কথা বললেও, বিজেপি কি তৃণমূলের আক্রমণে ভিতরে ভিতরে চাপ বোধ করছে?
শুক্রবার সকালে দেখা গেল বনগাঁয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে দিলীপ ঘোষ। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান রাজ্য বিজেপি সভাপতি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মালা দেন। তার পর সেই ছবি আবার টুইটও করেন। কে আবার তখন পিছন থেকে স্লোগান তোলেন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লহ প্রণাম, লহ প্রণাম। টুইটে দিলীপবাবু লিখেছেন, রাজ্য সরকারের উচিত এই বাড়িটি ভাল করে সংরক্ষণ করা।
যতদূর জানা যায় কল্যাণীর কাছে মামা বাড়িতে জন্মেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁদের বাড়ি ছিল এখানে। বনগাঁ হাই স্কুলে পড়েছেন তিনি।
Today few moments spent at the residence of the eminent literary “Bibhutibhushan Bandyopadhyay” at Bangaon (North 24 Parg). This house should be preserved by the state govt. considering the contribution of such a scholar, respected writer, in Bengali literature and culture. pic.twitter.com/ilBAt1TSdP
— Dilip Ghosh (@DilipGhoshBJP) November 27, 2020
তবে যে হেতু ভোট আসছে, ফলে সব কিছু আলোচনাই এখন রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া এমনিতেও এ দিন বনগাঁয় প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে মতিগঞ্জ হয়ে বাটার মোড় হয়ে নীলদর্পণ ভবনের সামনে এসে চা চক্রে বসেছিলেন দিলীপবাবু।
এখন প্রশ্ন সত্যিই কি দিলীপবাবুরা চাপে পড়েছেন?
বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক কিন্তু নতুন নয়। এক সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রায় কলকাতায় আসতেন। বড়বাজারে ওনার কিছু বন্ধুবান্ধব ছিল। কলকাতার ফুচকা খেতেও ভালবাসতেন তিনি। পরবর্তীকালে তপন শিকদার বা তথাগত রায়রা রাজ্য বিজেপি সভাপতি ছিলেন। তখনও কিন্তু বহিরাগত নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। কারণ, দিল্লির নেতারা রাজ্যের সংগঠন নিয়ে খুব বেশি সক্রিয় ছিল না।
কিন্তু চোদ্দ সালে বিজেপি ফের কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর থেকেই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বাংলার সংগঠনের ব্যাপারে যত্নশীল হন। প্রথমে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, পরে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ প্রমুখ নেতাদের বাংলার পর্যবেক্ষক করা হয়। ইদানীং সর্বভারতীয় সংগঠনের আরও পাঁচ নেতাকে বাংলার পাঁচটি অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে তৃণমূল বহিরাগত তকমা সাঁটার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। এবং তার পর থেকেই অদ্ভূত ভাবে দেখা যাচ্ছে, বাঙালি মণীষীদের বাড়ি যাওয়া বেড়ে গিয়েছে বিজেপি নেতাদের। শুধু তা নয়, সেখানে গিয়ে ছবি তুলে আবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও দিচ্ছেন। আর তা দেখেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে বিজেপি সত্যিই তৃণমূলের প্রচারের চাপে পড়ে গেল কি!
বাম, কংগ্রেসের বক্তব্য
যদিও বহিরাগত প্রশ্ন আবার কংগ্রেস বামেরা তৃণমূলকে খোঁচা দিতেও ছাড়ছে না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, বাংলা ও বাঙালি করে সরকার বিরোধী প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা চাপা দিতে চাইছে তৃণমূল। এও এক মেরুকরণের অস্ত্র। কিন্তু মানুষ বোকা নয়। ভোটে কাটমানি, লুঠ, তোলাবাজি, অনুন্নয়ন, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাবের মতো বিষয় নিয়েই কথা হবে। আর সিপিএমের এক রাজ্য নেতা বলেন, “তৃণমূলের কথা শুনে আমি হঠাৎ করে ধন্ধে পড়ে গেছি। যতদূর মনে পড়ে বাংলায় এই তথাকথিত বহিরাগতদের তো এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উনিই তো বিজেপির শরিক ছিলেন। বিজেপির সঙ্গে তো ঘর করেছে তৃণমূল। তখন বহিরাগত মনে হয় নি!”