
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিজেপির সর্বভারতীয় সভপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার ডায়মন্ডহারবারের কর্মসূচি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পথে হামলার সামনে পড়ল তাঁর কনভয়। বিজেপির অভিযোগ শিরাকল, সরিষা-সহ একাধিক জায়গায় তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডারা বিক্ষোভের নামে নাড্ডার কনভয়ের একাধিক গাড়ির উপর লাঠি, ইট নিয়ে হামলা চালায়। ভাঙচুর চালানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের গাড়িতেও। আর এই ঘটনার পরেই ফের তৃণমূল সরকারকে নিশানা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বললেন, শাসক দলের হার্মাদদের এই কাজে মদত দিয়েছে বাংলার পুলিশ। তিনি আগে থেকে প্রশাসনকে জানানোর পরেও এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিন ভাঙচুরের পরে রাজ্যপাল টুইট করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের স্বৈরাচার ও শৃঙ্খলাহীনতায় চিন্তিত। বিজেপি সভাপতির কনভয়ে শাসক দলের হার্মাদরা ভাঙচুর চালিয়েছে, এতে মদত দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।”
এতেই থেমে থাকেননি রাজ্যপাল। তিনি আরও বলেন, “সকাল ৮টা ১৯ মিনিটে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডায়মন্ডহারবারের পুলিশ সুপারকে আমি বলেছিলাম নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে। সকাল সাড়ে ৮টায় নিজের জবাবে মুখ্যসচিব বলেন তিনি ডিজিপিকে জানিয়ে দিয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার। কিন্তু তারপর ঘটনা বোঝালো আইনশৃঙ্খলার কতটা অবনতি হয়েছে।”
অবশ্য এই ঘটনার বিষয়ে রাজ্য পুলিশের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, “বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সুরক্ষিত ভাবে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর কনভয়ে কিছু হয়নি। দেবীপুর, ফলতা থানা ও ডায়মন্ডহারবারের মধ্যে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মানুষ হঠাৎ তাঁর কনভয়ের বেশ কিছুটা পিছনে থাকা কিছু গাড়িতে ইঁট ছোড়ে। সবাই সুরক্ষিত রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঠিক কী হয়েছিল তা জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।”
রাজ্যপাল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে আসার পর থেকেই বারবার তৃণমূল সরকারের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে জগদীপ ধনকড়ের। বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বারবার তাঁর তরফে রাজ্যের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে। উল্টে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অন্যান্য তৃণমূল নেতারা ধনকড়কে বিজেপির মুখপাত্র বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তারপরেও নিজের অবস্থান থেকে ধনকড় যে সরতে নারাজ তা নিজের টুইট দিয়েই বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির কনভয়ে হামলা হলেও নাড্ডার গাড়ি যেহেতু বুলেট প্রুফ এবং যেহেতু তিনি জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান, তাই তাঁর গাড়ির কাঁচ ভাঙেনি। কিন্তু তবে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ বিজেপির একাধিক নেতার গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নাড্ডার কনভয় যখন ডায়মন্ডহারবারে পৌঁছয়, তখন দেখা যায় কৈলাস বিজয়বর্গীয় গাড়ির একদিকের কাঁচ চৌচির হয়ে গিয়েছে। কৈলাস বলেন, তিনি হাতে চোট পেয়েছেন। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে।
যদিও এই ঘটনার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, জেপি নাড্ডার কী দরকার ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে খোঁচানোর। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিজেপি বলছে কোনও পুলিশি নিরাপত্তা রাস্তায় ছিল না। পুলিশ থাকলেও তাদের সামনেই ভাঙচুর হয়েছে বিজেপি নেতাদের গাড়িতে। জবাবে সৌগত বাবু বলেন, জেপি নাড্ডা তো দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী নন যে গোটা রাস্তা জুড়ে তাঁর জন্য পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকবে। তবে সংবাদমাধ্যমে গাড়ি ভাঙচুরের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি।
সৌগতবাবুর প্রতিক্রিয়া শুনে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “ওনার কথা আমি শুনেছি। এ সব কথা বলতে যে ওনার লজ্জা বোধটাও চলে গেছে তা দেখে অবাক হচ্ছি”। রাজ্য বিজেপি সভাপতির কথায়, আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি বাংলায় গুন্ডা রাজ চলছে। এখানে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। পুলিশ শুধু দলদাস হয়ে যায়নি, তৃণমূলের ক্যাডার হয়ে গেছে। গোটা দেশ দেখুক একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের সভাপতির উপর কেমন হামলা করেছে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী। তার পর বিচার করুক, বাংলায় গণতন্ত্র বলে কিছু আদৌ বেঁচে রয়েছে কিনা।
অনেকটা একই সুরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও।