
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লেখাপড়ায় দারুণ ভাল, চাকরিও করছেন দুর্দান্ত। সমস্যা হল চাকরি করতে গিয়ে আচমকা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হলেই মুশকিলে পড়ে যাচ্ছেন। এমন সমস্যা এড়াতে কী করা উচিত তা নিয়েই আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছিল জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেখানে পর্বতারোহীরা বললেন, পর্বতারোহণে বাড়ে মনোবল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। পেশা হিসাবেও তা নাকি তথ্যপ্রযুক্তির চেয়ে ঢের ভালো, যদি রোজগার করাটাই হয় প্রাথমিক লক্ষ্য।
আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপককুমার কোলে জানান কেন এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “বর্তমানে পড়ুয়ারা অত্যন্ত মেধাবী কিন্তু দেখা যাচ্ছে সামান্য মানসিক চাপ তারা নিতে পারছে না। তার ফলে তারা বিপথে চলে যাচ্ছে। নানা ভাবে বুঝিয়েও আমরা তাদের সেই পথ থেকে বের করে আনতে পারছি না। তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সে জন্যই এই আয়োজন।” তিন বারের এভারেস্ট জয়ী পেম্বা শেরিং শেরপা বলেন, “আপনি কতটা ছিপছিপে বা কতটা মোটা পর্বতারোহণে সেটা মূল বিচার্য বিষয় নয়। আপনি মানসিক ভাবে কতটা প্রস্তুত সেটাই আসল।”

ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে এখন পর্বতারোহনকে পেশা করে নিয়েছেন পাসাং রিটা শেরপা। তিনি আবার জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেরই প্রাক্তনী। আলোচনাচক্রের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন তিনিই। তিনি কুন ও কাংড়ি শৃঙ্গ জয় করেছেন। পেশা বদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার বাবা-কাকারা পর্বত আরোহণের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে সংবাদপত্র ও পত্রিকায় তাঁদের নাম, ছবি প্রভৃতি ছাপা হত। সেখান থেকেই আমার এই পেশাকে ভাল লাগা।… পড়াশোনা শেষ করে উপার্জন করা জরুরি। ধরুন আপনি তথ্যপ্রযুক্তি পেশায় থেকে এক বছরে যা উপার্জন করেন আমি দু’মাসেই আমার নিজের সংস্থা থেকে তার চেয়ে বেশি উপার্জন করি। তাই পেশা বদল করেছি।”

ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন ও ইয়ুথ এম্পাওয়ারমেন্ট কমিটির সদস্য ভাস্কর দাস ব্যাখ্যা করলেন পর্বতারোহণ কী ভাবে মানসিক চাপ কমায় ও মনোবল বাড়ায়। তিনি বলেন, “অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এখন আর শুধু খেলা নয়, এটা এখন শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। পর্বতারোহণের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার প্রায়ই লক্ষ করা যায়। একেবারে গোড়ার দিকে কাউকে একশো ফুট উপরে তুলে দিলে তিনি বলেন যে নামতে পারছেন না। আমরা তখন নানা কৌশলে তাঁকে নামিয়ে আনি। নেমে পড়ার পর তিনি বলেন, আর এক বার উঠে এবার তিনি নিজে নিজেই নামতে চান। পর্বতারোহণ এইভাবে মানসিক চাপ কমায় ও মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়।”

এপ্রসঙ্গে ট্রেক অর্গানাইজার সোমা মজুমদার পাল বলেন, “ট্রেকিং সাধারণত টুরিস্ট স্পটে হয় না। আমরা পরিচিত গণ্ডী থেকে বার হয়ে ট্রেকিং করতে যাই। প্রথমেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চলে যায়। তখনই আপনি বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। এবার একাত্ম হয়ে প্রকৃতির রূপ দেখছেন ও নিজেকে তার সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছেন। পরিচিত শয্যা ছেড়ে রাতে আপনি ঘুমাচ্ছেন স্লিপিং ব্যাগে। অর্থাৎ অপরিচিত জায়গা ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে ফেলছেন নিজের অজান্তেই। এর ফলে পরবর্তীকালেও যেকোনও পরিবেশের সঙ্গে সহজেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন।”
পর্বতারোহীরা নিজেদের জীবনের কথাই শুধু বলেননি, অনেকের অনেক কৌতূহলও মিটিয়েছেন। কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবির চক্রবর্তী বলেন, “যাঁরা এই আলোচনাসভায় এসেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁদের কথা খুব কাছ থেকে শুনলাম, আমাদের মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে তাঁদের পরামর্শ কাজে লাগবে।”