
দ্য ওয়াল ব্যুরো, মালদা: মালদার মানিকচকের সার্বজনীন কালীপুজোয় সম্প্রীতির অনন্য নজির। রাম-রহিম মিলিত হয়েই পুজোর আয়োজন হয় এখানে। বহু বছর ধরেই হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় একসঙ্গে এখানে কালীপুজো করে আসছেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম নেই।
প্রায় ১১৬ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো। মানিকচক থানা সংলগ্ন এলাকায় হয় এই পুজো। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় মানিকচক থানার পাশ দিয়ে বয়ে যেত গঙ্গা নদী। তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছিল নদী পাড়ে। নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছিল একরের পর একর জমি। সর্বহারা হতে বসেছিলেন মানিকচকের বাসিন্দারা। কথিত আছে সেই সময় মানিকচক থানায় কর্তব্যরত ফুদিনা সিং নামে এক পুলিশ কনস্টেবল স্বপ্নাদেশ পান।
সেই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর থেকে থানার সংলগ্ন এলাকায় কালীপুজার আয়োজন করেন তিনি। এলাকার মানুষের বিশ্বাস সেই পুজোর পর থেকেই ক্রমশ শান্ত হয়েছে গঙ্গা নদী। এমনকি থানা লাগোয়া এলাকা থেকে অভিমুখ পরিরর্তিত হয়েছে। বদলেছে গঙ্গা নদীর গতিপথও। তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে কালীপুজো করা হয় থানা চত্বরে। তবে কেবল মাত্র হিন্দুরা নন, প্রথম থেকেই এই পুজোয় সমান ভাবে অংশ গ্রহণ করে এসেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থানা চত্বরে নির্মাণ হয়েছে মায়ের মন্দির। স্থাপিত হয়েছে কালী ঠাকুরের পাথরের মূর্তি।
প্রতি বছর পূজা পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক পদে থাকেন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। এবছর পুজো কমিটির সম্পাদক জামাল খান আর সভাপতি হয়েছেন গৌর চন্দ্র মণ্ডল।মানিকচক বাসীর যৌথ উদ্যোগে পুজাকে কেন্দ্র করে ৪ দিন ধরে চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। কিন্তু এবছর করোনা আবহে বদল হয়েছে কিছু নিয়ম। পুজো হলেও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে আনুষঙ্গিক সব অনুষ্ঠান।
আপাতত পুজোর শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। মন্দির চত্বরে চলছে রঙয়ের কাজ। দেবীর পাথরের মূর্তিতেও নতুন করে রং করা হয়েছে। আলোর দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো থানা চত্বর। এই পুজোতে বরাবরই সক্রিয় ভাবে অংশ নেন মানিকচক থানার পুলিশ কর্মীরা। এক সময় মানিকচক থানার পুজো বলে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে তা সার্বজনীন। সব রীতিনীতি মেনে ভক্তি নিষ্ঠার সঙ্গেই এলাকার সকলে মেতে ওঠেন মায়ের আরাধনায়।