
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাঁর বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ, সল্টলেকে শিক্ষা দফতরেই দেখা যায় না শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ-উপাচার্যরা দেখা করতে চাইলে নিজের সুবিধামতো ডেকে নেন তাঁর নাকতলার বাড়িতে বা বিধানসভায়। কখনও বা সময় চেয়ে তাও পাওয়া যায় না!
এ সব অভিযোগ হয়তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অজানা নয়। এবং সম্ভবত অজানা নয় বলেই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সম্পর্কে অবগত থাকতে এ বার নিজেই অধ্যক্ষ-উপাচার্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সোমবার নবান্নে ‘অ্যাকাডেমিক রিভিউ’ মিটিং ছিল। ওই বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা ছাড়াও ছিলেন ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পার্থকে পাশে বসিয়ে সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, অধ্যক্ষ-উপাচার্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য তিনি একটি অ্যাপ বানাচ্ছেন। তার মাধ্যমেই সমস্ত অভাব, অভিযোগ ও সমস্যার কথাও শুনবেন তিনি।
নবান্নের কর্তাদের মতে, এর থেকে স্পষ্ট যে শিক্ষামন্ত্রীর উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তাই যে সমন্বয়টা শিক্ষামন্ত্রীর করার কথা, সেটা এখন মমতাকে করতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কলেজে ভর্তি নিয়ে রাজ্য জুড়ে যে তাণ্ডবের আবহ গত মরসুমে এ রাজ্য দেখেছে, তা যে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বেনজির, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শাসক দলের যুব সদস্যদের দাপটে রক্তপাতও বাকি ছিল না। পুলিশের শীর্ষ কর্তাকে ঘুরতে হয়েছিল ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ঝামেলার খবর পেয়ে হাজির হয়েছিলেন আশুতোষ কলেজে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সশরীরে উপস্থিতি তখনও প্রমাণ করে দিয়েছিল, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁর ভূমিকা পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এই গন্ডগোলের সমাধানের প্রসঙ্গ ওঠে সোমবারের উপাচার্য বৈঠকেও। সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর দু’টোয় নবান্নর সভাঘরে আয়োজিত ওই বৈঠকে শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি ও গন্ডগোলের ব্যাপারে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং সে সময়ে চাপা ছিল না তাঁর ক্ষোভও।
এ দিনের আলোচনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, কয়েকটি কলেজের গন্ডগোলের জন্য রাজ্যের সব কলেজের বদনাম হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজন সর্বত্র অনলাইন ভর্তিপদ্ধতি ঠিক ভাবে চালু করা। সব কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু থাকলেও, কিছু জায়গায় নানা রকম সমস্যা হয়েছে। মমতা জানান, অনলাইনে ভর্তি হলে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে বসেই ভর্তি হতে পারে। কলেজে আসতে হয় না, ঝামেলার সুযোগও থাকে না। এটা তো সুবিধাই হবে। আগামী বছর থেকে যাতে সব কলেজেই অনলাইনে ভর্তিতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখার জন্য বিশেষ করে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শিক্ষা মহলের একাংশের মত, এই নির্দেশ তো শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়াই যথেষ্ট ছিল। তাঁরই দেখার কথা এই বিষয়গুলি। তা হলে কি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ যে ব্যর্থ, তা মেনেই নিয়েছেন মমতা? সেই কারণেই কি এই বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা রাজ্যের উপাচার্যদের কাছে খুলে বললেন?
শুধু ভর্তির গন্ডগোলই নয়। অভিযোগ উঠেছে, স্কুল কলেজে টয়লেট ও মিড ডে মিল সেন্টারের জন্য কেন্দ্রের টাকা বরাদ্দ করা হলেও, সব জায়গায় এখনও সেগুলো সম্পূর্ণ হয়নি। সূত্রের খবর, এই নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সেক্রেটারিরা। মুখ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সবার সামনেই বলেন, “এগুলো যাতে তাড়াতাড়ি হয়, সেটা আপনি দায়িত্ব নিয়ে দেখে নিতে পারেন না! আপনি দায়িত্ব নিন!”
কলেজে গন্ডগোল নিয়ে মুখ খোলা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রথম নয়। এর আগেও বহু বার তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এ বিষয়ে। তবে তাঁর এই ক্ষোভ ও উদ্বেগে পরিস্থিতি বদলেছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। জানার অবশ্য উপায়ও নেই, সামনের ভর্তি-মরসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া।