
দ্য ওয়াল ব্যুরো, দক্ষিণ ২৪ পরগনাঃ এক বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালেই পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ। স্ত্রী, ছেলে, বউমা আসেনি নিতে। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকার পরেও বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধের স্থায়ী ঠিকানা বলতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল। রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার খেয়ে আর অন্য রোগীদের পরিবারের লোকজন এবং চিকিৎসক, নার্সদের সাহায্যে বেঁচে রয়েছেন তিনি। এক বছরের বেশি এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন ধর্ম বেরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের আমঝাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তীতকুমার গ্রামের ছাঁটুইপাড়ার বাসিন্দা ধর্ম বেরা। তিনি পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন। কখনও দিনমজুরির কাজও করতেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু অর্থনৈতিক অনটনের জন্য বেশি দূর লেখাপড়া হয়ে ওঠেনি। ছোট বেলায় বিয়ে হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ধর্ম বেরার স্ত্রী বিয়োগ হয়। দ্বিতীয় বার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মিনাখাঁ থানা এলাকার সন্ধ্যা দেবীকে বিয়ে করেন তিনি। দম্পতীর দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন। দুই মেয়ে কানন ও ঝর্ণার বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাপী বেরা বিয়ে করলেও ছোট ছেলে ঝন্টু এখনও বিয়ে করেনি।
জানা গিয়েছে, দুই ছেলে, স্ত্রী এবং পুত্রবধূ ময়নাকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল ধর্ম বেরার। দুই ছেলে কলকাতায় কাজ করে ভালো উপার্জনও করে। তাছাড়াও গ্রামেই ছয় বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু এত কিছু থাকার পরেও প্রতি দিনই পরিবারের সকলে বৃদ্ধের উপর অত্যাচার করত বলে অভিযোগ। বৃদ্ধ ধর্ম বেরার দাবি, বয়স হয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন ঠিকমতো খেতে দিত না। জামা-কাপড়ও দিত না। কিছু বললে বাড়ির বাইরে বের করে দিত।
সূত্রের খবর, গ্রায় এক বছর আগে ধর্ম বেরার হার্টের সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় বৃদ্ধকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে বেরা পরিবারের লোকজন। হাসপাতালে ভর্তির সময় বৃদ্ধর যাবতীয় তথ্য ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি চিকিৎসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সহ একটি কম্বল ব্যাগের মধ্যে বৃদ্ধের বেডের পাশেই রেখে দেয় পরিবারের লোকজন। সুস্থ হলে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলেছিল পরিবারের সদস্যরা।
বৃদ্ধের অভিযোগ, প্রথম কয়েক দিন হাসপাতালে খোঁজখবর নিতে আসলেও বর্তমানে পরিবারের কেউ সঠিকভাবে খোঁজ রাখে না ধর্মের। রাতের দিকে ধর্ম বেরা হাসপাতালের মেঝেতে পেপার পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। রাতে হাসপাতালের মেঝেতে থাকলেও দিনের বেলায় হাসপাতালের নির্দিষ্ট একটি বেডেই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় এক বছর। সামনেই দুর্গাপুজো। বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের কেউ না নিয়ে যাওয়ায় যেতে পারছে না ধর্ম। তবে বাড়িতে গেলে খাবার জুটবে না, বরং স্ত্রী, ছেলে ও বউমার হাতে ফের নির্যাতিত হবেন সেই আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। অবশ্য এতে সমস্যার মধ্যেও ধর্মের আশা হয়তো কোনও একদিন পরিবারের লোকজন তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাবে! তাই চাতকের মতো অপেক্ষায় রয়েছেন।
হাসপাতালের বিছানায় বসে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বৃদ্ধ ধর্ম বেরার উক্তি “জানি না কবে এমন করুণ পরিস্থিতির যবনিকা ঘটবে! তবে তা সময়ই উত্তর দেবে।”