
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুলওয়ামা কাণ্ডের পর বাংলা জুড়ে রটেছে গুজব। ঘটেছে একাধিক গণপিটুনির ঘটনা। কিন্তু এ সব যে বাংলায় বরদাস্ত করা হবে না তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজব এবং গণপিটুনি রুখতে তাই শনিবারই নবান্নে ডাকা হয়েছিল উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। এই বৈঠক থেকে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের সঙ্গে। ডিজি’র সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিধাননগর, কলকাতা এবং হাওড়ার পুলিশ কমিশনার।
এ দিনের বৈঠক থেকে রাজ্যের প্রতিটি থানাকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিলির মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কোনও বিদ্বেষমূলক পোস্ট করলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে উপযুক্ত কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠক থেকে।
শুক্রবার তারকেশ্বরের সরকারি সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “হাত জোড় করে আপনাদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। ওরা (বিজেপি) নিজেরা বোরখা কিনে পরিয়ে রটিয়ে দিচ্ছে ওই দেখো ছেলেধরা আসছে।” সেই সূত্র ধরেই এ দিন ডিজি বলেন, নিজের এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে এবং সন্দেহ জাগলে থানায় খবর দিন। আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না। যেসব এলাকায় ইতিমধ্যেই গুজবের জেরে গণধোলাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার থানাগুলিকে আরও সতর্ক হতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় লোকেদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের পরামর্শ নিয়ে এই সমস্যা রুখতে হবে বলেও জানিয়েছেন বীরেন্দ্র।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পর থেকেই উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি। কলকাতা শহরেই আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কিছু কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা। হেনস্থার শিকার হয়েছেন কলকাতার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা কাশ্মীরি চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবার। এমনকী রেহাই পায়নি চিকিৎসকের সন্তানরাও। কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন অনুজ শর্মা। কলকাতার নতুন নগরপাল বলেছিলেন, শহরের যেসব জায়গায় কাশ্মীরিরা বসবাস করেন, সেইসব এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এ দিনের বৈঠকে একই কথা বলেন ডিজি বীরেন্দ্র। তাঁর কথায়, এ রাজ্যে বসবাসকারী কোনও কাশ্মীরি যাতে হেনস্থা বা অত্যাচারের শিকার না হন সেদিকে কড়া নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় ক্লাবগুলিকেও সতর্ক করা হবে।
কাশ্মীরি ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে শুক্রবার সকালেই দেশের শীর্ষ আদালত দশটি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে বলেছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে বাংলারও। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে গুজব রটানো রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তার দফতরে নবান্নের তিন তলায় চালু করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল। সূত্রের খবর, সেখানে বসেই বিশেষজ্ঞরা নজর রাখবেন কোথায় কী পোস্ট হচ্ছে। সেই পোস্টের মধ্যে যদি উত্তেজনা তৈরি করার মতো কিছু থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে সেখানে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। একই সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলবে পুলিশি নজরদারিও।