
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন শিক্ষক। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বহু আবেদন নিবেদন করেও পাচ্ছিলেন না অ্যাম্বুল্যান্স বা টোটো। খবর আসে প্রাক্তন ছাত্রের কানে। সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মোটরবাইক নিয়ে পৌঁছে যান শিক্ষকের বাড়ি। প্রিয় শিক্ষককে মোটরবাইকে করে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করে কোয়ারেন্টাইনে গেলেন ছাত্র। এভাবেই গুরুদক্ষিণা মেটালেন নিত্যানন্দ বর্মন।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের শোভাবাড়িতে নেতাজী বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল। সেই স্কুলে ২০১২ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বছর তিরিশের নিত্যানন্দ। তাঁর বাড়িও শোভাবাড়ি এলাকায়। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন তিনি। স্কুলের কাছেই বাড়ি বানিয়ে থাকেন ঐ স্কুলের গেম টিচার অমিতকুমার ঘোষ। ২০১৯ সালে তিনি স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন। অবসর নেওয়ার পর স্কুল থেকে পাওয়া এককালীন টাকার একটি বড় অংশ স্কুলের উন্নয়নে দান করেছিলেন জনপ্রিয় শিক্ষক অমিতবাবু।
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হন অমিতবাবু। চিকিৎসকের পরামর্শে হোম আইসোলেশনে ছিলেন। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে তাঁর কাশি শুরু হয়। রাতে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাঁর শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতাল প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ। ওই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি বহু আবেদন নিবেদন করেও হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাননি বলে অভিযোগ। বহু চেষ্টায় জোটেনি কোনও টোটো বা রিক্সাও। ফলে সমস্যায় পড়ে যান তাঁর পরিবারের লোক।
অমিতবাবুর বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে থাকেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র নিত্যানন্দ। তাঁদের প্রিয় শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে যেতে পারছেন না এই খবর কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজের রেনকোটকে পিপিই হিসেবে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বাইক চালিয়ে চলে আসেন তার প্রাক্তন শিক্ষকের বাড়িতে। এরপর প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ মোটরবাইক চালিয়ে অমিতবাবুকে নিয়ে যান কোভিড হাসপাতালে। ভর্তি করেন। এরপর সোজা চলে যান হোম কোয়ারেন্টাইনে।
অমিতবাবু জানান, জ্বর হওয়ায় করোনা পরীক্ষা করেন। চলতি মাসের চার তারিখ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে হোম আইসোলেশনে ছিলেন। কিন্তু বুধবার থেকে কাশির সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। তিনি বলেন,‘‘ বাড়ির সবাই আমাকে বলে হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও প্রাইভেট অ্যাম্বুল্যান্স পাইনি। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও আসছি আসছি করে আর আসেনি। এরপর নিত্যানন্দ ওর বাইকে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এল। না হলে আরও দেরি হত। ওঁর যেন কিছু না হয়।’’
মাস্টারমশাইকে হাসপাতালে পৌঁছনোর পর ছাত্র নিত্যানন্দ বলেন, ‘‘আমার প্রাক্তন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। খবর পেয়ে আমি নিজে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য কোভিড হাসপাতালে ফোন করি। সেখান থেকে কোনও রেসপন্স না পেয়ে তাঁকে নিজে হাসপাতালে নিয়ে এলাম। এটা আমার গুরুদক্ষিণা।’’
অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাক্তার সুশান্ত রায় যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে চারটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। আমি নিজে হাসপাতালে খবর নিয়ে দেখেছি ঐ সময় অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য কোনও কল আসেনি। এর আগে কয়েকজন বাইকে করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা উপসর্গহীন করোনা রোগী ছিলেন। কিন্তু এমন একজন রোগীকে এভাবে বাইকে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। রাস্তায় কোনও সমস্যা হতে পারত। তখন রোগীকে ম্যানেজমেন্ট দিতে মুশকিল হত।’’