
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতার এক গ্রাহকের লকার ভেঙেছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তারা। সেই মামলায় শুক্রবার মাইলফলক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ৬ মাসের মধ্যে ব্যাঙ্কের লকার নীতি বদলে নতুন নীতি প্রবর্তনের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বক্তব্য, “গ্রাহকের লকারে কী রয়েছে তা জানা নেই, এটুকু বলেই ব্যাঙ্ক দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না। আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালত, ব্যাঙ্কের সঙ্গে গ্রাহকের মামলা অনন্তকাল ধরে চলুক—তা কখনও হতে দিতে পারি না।”
যে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে গোটা বিতর্ক তার উৎস্য কলকাতায়। অমিতাভ দাশগুপ্ত নামে এক গ্রাহকের ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় লকার ছিল। বকেয়া মেটানো হয়নি বলে ব্যাঙ্ক তাঁর লকার ভেঙে সোনার গয়না বের করে নিয়েছিল। যখন ব্যাঙ্ক তা ফেরত দেয় তখন ৭টির মধ্যে ৫ টিই ছিল না।
প্রথমে তিনি জেলার ক্রেতা সুরক্ষা মঞ্চে অভিযোগ করেছিলেন। সেই মঞ্চ ব্যাঙ্ককে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে। সেই মামলা পরে গড়ায় রাজ্য ও জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা মঞ্চে। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা মঞ্চ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমিয়ে ৩০ হাজার টাকা করে দেয়। জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা মঞ্চ রাজ্যের রায় বহাল রাখে।
এর পর জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা মঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে অমিতাভবাবু সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলার চূড়ান্ত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, গ্রাহককে না জানিয়ে তাঁর লকার ভাঙার দায়ে ইউবিআইকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই জরিমানার টাকা দোষী ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে মামলার খরচ বাবদ আরও ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে ব্যাঙ্ককে।
এই মামলার রায় ঘোষণার সময়ে বিচারপতি এমএম সান্তনাগৌদার ও বিচারপচি বিনীত সরণ বলেন, একেকটা ব্যাঙ্কের লকারের নিয়মকানুন একেক রকম। পরস্পরের সঙ্গে সঙ্গতি নেই। ব্যাঙ্ক যদি কোনও গ্রাহকের লকার ভাঙে, তা হলে ভিতরে থাকা সামগ্রীর হিসাবে বিতর্ক তৈরি হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব কার?
এই অনিয়ম দূর করার উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট এদিন স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, — লকার ভাঙার আগে গ্রাহককে অবশ্যই জানাতে হবে।
নিরপেক্ষ সাক্ষী এবং দায়িত্বশীল অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া তা ভাঙা যাবে না।
যতদিন না পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুনির্দিষ্ট নিয়ম প্রবর্তন করছে, ততদিন এই নিয়ম বহাল থাকবে।
৬ মাসের মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নতুন নিয়ম প্রবর্তন করতে হবে।
লকারের জিনিসপত্র খোয়া গেলে কার দায়িত্ব তাও স্থির করে দিতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে।
লকারের কী রয়েছে তা জানা নেই বলে ব্যাঙ্ক তার দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবে না।