
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নদিয়ার রানাঘাটে সমবায় ব্যাঙ্কে ঢুকে এক ম্যানেজারকে হুমকি দেওয়া এবং ব্যাঙ্কের এক কর্মীর কলার ধরে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং ব্যাঙ্ক কর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ওই ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিযোগ, রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য ও তাঁর কয়েক জন অনুগামী দলবল নিয়ে সমবায় ব্যাঙ্কে এসে ম্যানেজারকে হুমকি দিতে শুরু করেন। সেই ছবি মোবাইল ফোনে তুলছিলেন ব্যাঙ্কের এক কর্মী। ওই কর্মীকে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টেনে বের করে জামার কলার ধরে হেনস্থা করেন নেতা ও তাঁর অনুগামীরা। ঘটনার জেরে নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিষেবা বন্ধ করে দেন চাপড়া ধানতলা কৃষি উন্নয়ন সমিতি পরিচালিত সমবায় ব্যাঙ্কটি। ফলে সমস্যায় ওই সমবায় ব্যাঙ্কের শতাধিক গ্রাহক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গত ২২ জুলাই রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জগন্নাথ রায়, ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির সদস্য জগদীশ মণ্ডল ও এলাকার বেশ কয়েক জন লোক ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে যান। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে তাঁরা বলেন, বর্তমানে ওই সমবায়ের সদস্য তথা গ্রাহক রয়েছেন সাতশো জন মতো। এই সংখ্যা আরও অন্তত ৪০০ বাড়াতে হবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, সামনেই বার্ষিক সভা। তার আগে নতুন কাউকে সদস্য করা যাবে না। এই নিয়ে ব্যাঙ্কের ভেতরেই উত্তেজনা তৈরি হয়। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে হুমকি দেওয়া হয় ও অন্য এক ব্যাঙ্ক কর্মীকে মারধর করা হয় ব্যাঙ্কের ভেতরে। এই ছবি ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে ধানতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, যত ক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সেই মতো ২৩ জুলাই ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত জগন্নাথ রায় বলেন, “ব্যাঙ্কের কয়েকটি অনৈতিক কাজ বন্ধের ব্যাপারে গত এক মাস ধরে ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম আলোচনায় বসার জন্য কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই কারণে গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২২ জুলাই আমরা ১৮৫ জন গিয়েছিলাম ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে। তিনি কথা বলতে চাননি উল্টে তাঁরই এক সহকর্মী, যাঁকে অনৈতিক ভাবে কাজে ঢোকানো হয়েছে, তিনি তাঁর মোবাইলে ঘটনা রেকর্ড করছিলেন বিশেষ করে সেখানে সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। তা নিয়েই বচসা।” তিনি বলেন, “আমি তাঁকে হুমকি দিইনি। তা ছাড়া ব্যাঙ্কটি যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে সেখানে রেকর্ডিং করার কি প্রয়োজন আছে একজন সাধারণ কর্মচারী হয়ে? জনগণের সামনে সত্য উদঘাটন করা হোক। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
ব্যাঙ্কের গ্রাহক হালিমা বিবি গাজি বলেন, “গত ২৩ তারিখ থেকে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় টাকা-পয়সা তুলতে পারছি না।” ক্যাশিয়ার দীপনারায়ণ রায় বলেন, “সেদিন আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং আমার জামার কলার ধরে টেনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ওই নেতা। আমি চাই অভিযুক্তের শাস্তি হোক।”