
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘গন্ধটা খুব সন্দেহজনক..’।
কুকুররা অপরাধীর গন্ধ পায় এটা জানা ছিল। শুঁকে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরকও খুঁজে দিতে পারে। তাই বলে অসুখবিসুখেরও গন্ধ পায় কুকুররা!
একেবারেই হাসির কথা নয়। পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত তথ্য। কুকুরা স্রেফ শুঁকে ধরে দিতে পারে অনেক জটিল রোগ। এমনকি ক্যানসারের মতো মারণ রোগও চিহ্নিত করতে পারে কুকুররা। ফুসফুসের ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, ব্লাডার ক্যানসার এমনকি প্রস্টেট ক্যানসারও আলাদা করে ধরতে পারে। শুধুমাত্র গন্ধ শুঁকেই।
তাজ্জবের কথাই বটে। কুকুরদের ঘ্রাণশক্তি নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তবে কুকুরদের এই ঘ্রাণশক্তি কতটা প্রবল এবং তাকে কী কী কাজে লাগানো যেতে পারে, সে নিয়ে বহু বছর ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা বলছেন, ডজনখানেক রোগ ধরার ক্ষমতা আছে কুকুকের। করোনা সংক্রমণও চিনতে পারে। তবে তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হয় কুকুরদের।
![These diagnostic dogs may be able to quickly spot people with coronavirus - MarketWatch]()
২২ কোটি রকম গন্ধ পেতে পারে কুকুররা
কুকুরের ঘ্রাণশক্তি কতটা শক্তিশালী তার কয়েকটা পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, প্রায় ২২ কোটি সেন্ট রিসেপটর আছে কুকুরের শ্বাসযন্ত্রে। মানুষের সেই সংখ্যা ৫০ লক্ষের কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, মানুষের সেন্ট রিসেপটরের থেকে কুকুরদের সেন্ট রিসেপটর ১০ হাজার গুণ বেশি সঠিক ও নির্ভুল। তার মানে, কয়েক লক্ষ কোটি গন্ধের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট কোনও গন্ধ আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে কুকুররা। প্রতি মিনিটে তারা শ্বাস নেয় ৩০০ বার, এর মানে হল কুকুরদের অলফ্যাক্টরি কোষ ক্রমাগত নতুন নতুন গন্ধের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং সেইসব গন্ধ মনেও রাখতে পারে।
কী কী রোগের গন্ধ পায় কুকুর?
গবেষকরা বলছেন, ত্বক, ফুসফুস, ব্লাডার, রক্ত ও প্রস্টেটের ক্যানসার আলাদা করে গন্ধ শুঁকে ধরতে পারে কুকুররা। বিশেষ প্রশিক্ষণ দিলে ক্যানসার কোষ শুঁকেই ধরে দিতে পারে তারা। ২০০৬ সালের একটি পরীক্ষায় পাঁচটি ভিন্ন প্রজাতির কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেখা গিয়েছিল, রোগীর রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা শুঁকে ক্যানসার চিহ্নিত করে পেরেছে তারা। তাও আবার ৮০-৯০ শতাংশ সঠিকভাবে।
ক্যানসার শুধু নয়, ম্যালেরিয়া, পারকিনসন্স রোগও সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে কুকুর। এমনকি রোগীর শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ থাকলে নমুনা শুঁকে ধরে দিতে পারে তারা। ২০১৩ সালে একটি গবেষণাপত্র সামনে এসেছিল, যেখানে গবেষকরা বলেছিলেন মাইগ্রেনের ব্যথা ৫৪ শতাংশ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে কুকুর। এমনকি মাথাব্যথা শুরু হলে পোষ্য কুকুরা অনেকসময় তাদের মালিকদের সতর্কও করে দেয়। সেই গবেষণাপত্রে নিজেদের এমন অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন অনেকে।
২০১৬ সালে আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া আইসোপ্রিন রাসায়নিকের গন্ধ পায় কুকুররা। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে এই জাতীয় রাসায়নিক বের হয় নিঃশ্বাসের সঙ্গে। ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, চরম মানসিক চাপ ইত্যাদি মানসিক পরিস্থিতিগুলোও বুঝতে পারে কুকুর। গবেষকরা বলছেন, কুকুরকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিলে রোগ নির্ণয় তো বটেই, মানসিক স্বাস্থ্যের থেরাপির কাজেও লাগানো যেতে পারে কুকুরদের।