
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছেলে বাড়ি ফিরবে কবে? কেমন আছে পরিবার? চিনে আটকে পড়া আপনজনের চিন্তায় ব্যাকুল বাড়ির লোকজন। চিন ছাপিয়ে নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক এখন দেশেও। আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলায় জেলায়। বোলপুরের বাসিন্দা শুভম পাল বর্তমানে রয়েছেন বেজিংয়ে। শহর থেকে বেরনো বারণ, দেশে ফেরার রাস্তাও কার্যত বন্ধ। বাড়িতে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। বর্ধমান থেকে চিনে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন আলহিলাল। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি এখন ঘরবন্দি। দেশে ফেরার জন্য মরিয়া।
বোলপুরের চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শুভম পাল কর্মসূত্রে বেজিংয়ে রয়েছেন গত পাঁচ বছর। শুভমের মা জানিয়েছেন, দু’বছর আগে ছেলে বাড়ি ফিরেছিল। এবছর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাসের আতঙ্কে চিন থেকে দেশে ফেরার পথ কার্যত বন্ধ। শুভমের বাবা রঞ্জন পাল অসুস্থ। হাঁটাচলা করতে পারেন না। ফোনেই যোগাযোগ রয়েছে ছেলের সঙ্গে। শুভমের মা বলেছেন, ‘‘টিভিতে প্রতিদিনের খবর শুনছি। সরকার ভারতীয়দের ফেরানোর কী ব্যবস্থা করেছে খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করছি। ছেলের শরীরেও যদি রোগ ধরে, ভয় পাচ্ছি আমরা সকলেই।’’

বেজিংয়ে শুভম পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে উহানে। বেজিংয়ে এখনও অবধি ১০০ জনকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাট এখানেও বন্ধ। চিনা নববর্ষের আগে সব শুনসান। গোটা শহর যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে গেছে।’’ কয়েকদিনের খাবার সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুভম। শহরের বড় বড় জায়গাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রেল-বাস পরিষেবা বন্ধ। দোকানপাট-বাজারেও তালা পড়ে গেছে। তবে সরকারের তরফে ভাইরাস ঠেকানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শুভম। অহেতুক সবাইকে গুজব ছড়াতে বারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভাইরাস না মারণাস্ত্র! রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করছে চিন, সংক্রমণ নাকি ছড়িয়েছে ল্যাব থেকে

এদিকে ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁটা পূর্ব বর্ধমানের ব্যবসায়ী পরিবার। পূর্ব বর্ধমানের নবীনগরের বাসিন্দা আলহিলাল গত ২০ বছর ধরে চিনের বাসিন্দা। টেক্সটাইলের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। আলহিলালের স্ত্রী নার্গিস পারভিন ও ছেলে আহান শেখও চিনের বাসিন্দা। গোটা পরিবারই এখন দেশে ফিরতে মরিয়া।

আলহিলাল জানিয়েছেন, সেনঝেনে ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ভাইরাসের আতঙ্কে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হওয়ার মুখে। শহরেই কার্যত বন্দি তাঁরা। বাইরে বেরনোর অনুমতি নেই। কোনওভাবে যদি সংক্রমণ তাঁদের পরিবারেও ছড়িয়ে পড়ে এই আশঙ্কা করছেন আলহিলাল। জানিয়েছেন, নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে।
ছেলে কবে বাড়ি ফিরবে এই চিন্তায় ব্যাকুল আলহিলালের বৃদ্ধ বাবা-মা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মহম্মদ জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, সেনঝেনে বারবার ফোন করে ছেলের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কীভাবে ছেলেকে বাড়ি ফেরানো যায় সে জন্য সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলছেন তাঁরা। মা হালিমা বিবির কথায়, ‘‘সরকার বলেছে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনবে। আমার ছেলেও যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসে, আর কিছু চাই না।’’