দ্য ওয়াল ব্যুরো: ধর্মতলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ধর্ণায় বসেছিলেন, তখন সমালোচনা কম করেননি বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু দিদি যাঁকে কখনও গুণ্ডা, কখনও শয়তান বলেছেন, তিনি যেন সমস্ত ঝাল জমা করে রেখেছিলেন গত পাঁচ দিন ধরে। যেন একদিনেই মিটিয়ে দেবেন!
শুক্রবার জলপাইগুড়িতে বিজেপি-র সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেটাই করলেন। বললেন, “এই প্রথমবার গোটা দেশ দেখল, চোর-লুটেরাদের বাঁচাতে কোনও মুখ্যমন্ত্রী দিন-দুপুরে ধর্ণায় বসেছেন। যে লোকগুলো খেটে খাওয়া, গরিব শ্রমিক-মজুরের টাকা লুট করেছে তাদের পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ তো অভাবনীয়!” এখানেই থামেননি মোদী। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তারিয়ে তারিয়ে বলেন, “কিন্তু যে মানুষগুলোর টাকা লুঠ হয়েছে, যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের পরিবার চিৎকার করে দিদির কাছে প্রশ্ন করছেন, দিদি তোমার স্বার্থ কী? ওঁরা জানতে চাইছেন, দিদি রোজভ্যালি, সারদার তদন্ত আপনি কেন ঘেঁটে দিচ্ছেন? কেন ধর্ণা দিচ্ছেন?”
মোদী যখন এ কথা বলছেন, জলপাইগুড়ির চূড়াভাণ্ডার ময়নাগুড়ির আশি বিঘা মাঠ তখন কানায় কানায় পূর্ণ। থই থই। এবং সেই ভিড়ের উদ্দেশে, চোয়াল শক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, “যারা টাকা লুঠ করেছে তাদের তো ছাড়বই না, যাঁরা তাদের রক্ষা করছেন, বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তাঁরাও ছাড় পাবেন না! যতই ধর্ণা দিন, চিটফান্ডের পাই পয়সার হিসাব নেওয়া হবে।”
নরেন্দ্র মোদীর এই মন্তব্যের পাল্টায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার ওটা ধর্ণা ছিল না। ওটা সত্যাগ্রহ। উনি নিজে দুর্নীতির মাস্টার। চোরের মায়ের আবার বড় গলা।” তাঁর আরও কটাক্ষ, “ভোট এলে ‘চাওয়ালা’। ভোট ফুরোলে রাফায়েলওয়ালা। এখন তো লোকে বলছে কেমন আছেন ম্যাডিবাবু।”
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা তথা চিটফান্ড বন্ধ করতে ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নতুন বিলে অনুমোদন দিয়েছে। যে বিলে বলা হয়েছে, কোনও বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা তথা চিটফান্ড মানুষের থেকে টাকা তুললে, তাদের সব সম্পত্তি বেচে আমানতকারীদের টাকা আদায় করা হবে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি গরিব মানুষকে আশ্বাস দিচ্ছি। আপনাদের আওয়াজ আইনের দরজা পর্যন্ত যাবেই।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্ণা নিয়ে এর পরেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিদেশে গিয়ে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। কিন্তু এ কোন সত্যাগ্রহ হল কলকাতায়?
গত রবিবার চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআইয়ের টিম পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে। গণ্ডগোলের সূত্রপাত তখন থেকেই। কলকাতা পুলিশ সিবিআই অফিসারদের ওখান থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায় শেক্সপিয়ার সরণী থানায়। তার পর রাজীব কুমারের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরে ওখানে দাঁড়িয়েই সিবিআইকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-দের ‘গুণ্ডাগিরি’ নিয়ে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দেন মমতা।
এ দিন তারই পাল্টা আক্রমণ করেন মোদী। বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একজন দিদি। কিন্তু এখানে সব ব্যাপারে দাদাগিরি চলছে। গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ব্যবস্থা বাংলায় বিপন্ন। তাঁর কথায়, দিদি দিল্লি যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। অথচ বাংলায় সিন্ডিকেট রাজ, দালালি ইত্যাদির জন্য রোজ বদনাম হচ্ছে। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চলছে।
প্রসঙ্গত, বাংলায় তোলাবাজি, সিন্ডিকেট নিয়ে গত সপ্তাহে ঠাকুরনগর ও দুর্গাপুরের সভা থেকে মমতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিনও সেই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি বিশদে করেন।
সব মিলিয়ে পরিষ্কার যে, মমতা-র ধর্ণা পরবর্তী সময়ে দিদি-মোদী লড়াইটা এখন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ও ইগোর লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে। দু’জনেই যেন এসপার ওসপার করতে নেমে পড়েছেন। এক জন বাঘা তেঁতুল, তো অন্য জন বুনো ওল।