
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফাদার কুরিয়াকোসের শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসা সন্ন্যাসিনীদের অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তিরুঅনন্তপুরমে। দাবি, ওই সন্ন্যাসিনীরা অভিযুক্ত বিশপ ফ্র্যাঙ্কো মুলাক্কলের সমর্থক।
ধর্ষণে অভিযুক্ত বিশপ ফ্র্যাঙ্কো মুলাক্কলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার পরেই সোমবার মৃত্যু হয় কুরিয়াকোস কট্টুথারা নামের ৬২ বছরের ওই ফাদারের। পাঞ্জাবের একটি চার্চের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ যদিও এটিকে সাধারণ মৃত্যু বলেই জানিয়েছে, কিন্তু ফাদারের পরিবারের দাবি খুন হতে হয়েছে তাঁকে। ময়না-তদন্তের পরে বৃহস্পতিবার, কেরালার পাল্লিপ্পুরমে আয়োজিত হয় তাঁর শেষকৃত্য।
সেখানেই উপস্থিত ছিলেন এক দল সন্ন্যাসিনী। আচমকাই ফাদার কুরিয়াকোসের কিছু অনুগামী খেপে ওঠেন তাঁদের উপর। চার্চ থেকে চলে যেতে বলেন চেঁচিয়ে। ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান সন্ন্যালিনীরা। বেরিয়েও যান কিছু পরে। এক সন্ন্যাসিনীকে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায়। তিনি বলেন, “আমি পাঞ্জাবে ফাদার কুরিয়াকোসের কাছে কাজ করেছি। ওঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি। তাই এত দূর ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু…”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মূল অনুষ্ঠান থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়েছিলেন ওই সন্ন্যাসিনীরা। সংবাদমাধ্যমের ব্যক্তিরা এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে আচমকাই খেপে ওঠেন চার্চ কর্তৃপক্ষ। চিৎকার করে বেরিয়ে যেতে বলেন ওই সন্ন্যাসিনীদের। জানান, চার্চে কোনও সাক্ষাৎকার দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষ এতই উদ্ধত ছিল, মোতায়েন পুলিশ এসে ঘটনা সামাল দেয়।
জলন্ধর এলাকায় ধর্মযাজক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন মৃত ফাদার কুরিয়াকোস কাট্টুথারা। অভিযুক্ত বিশপের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বয়ান দিয়েছিলেন তিনি। মিশনারিজ অফ জেসাসের অন্তর্গত একটি মঠে ভোকেশনাল ট্রেনার হিসেবেও কাজ করতেন তিনি। তাছাড়া বিশপের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসিনীদের ক্ষোভের বিষয়টিও তিনি দেখাশোনা করছিলেন।
এক সন্ন্যাসিনী জানান, তিনি অভিযোগকারিণীর পাশে আছেন। তিনি চান, প্রকৃত তদন্ত হোক এবং সত্যটা সামনে আসুক। যেমন চেয়েছিলেন কুরিয়াকোসও। ওই সন্ন্যাসিনীর কথায়, “ফাদার কুরিয়াকোস অকুতোভয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অসম্ভব চাপের মুখেও বিশপ ফ্র্যাঙ্কোর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। ওঁর মৃত্যুতে স্তম্ভিত আমরা।”
জলন্ধরের একটি গির্জার বিশপ ফ্র্যাঙ্কো মুলাক্কলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন কেরালার এক সন্ন্যাসিনী। অভিযোগ গড়ায় ভ্যাটিক্যান পর্যন্ত। পদ থেকে বরখাস্তও করা হয় অভিযুক্ত ফ্র্যাঙ্কোকে। তদন্তের পরে ফ্র্যাঙ্কোরে গ্রেফতার করা হলেও, তার তিন সপ্তাহের মধ্যে কেরল হাইকোর্ট ফ্র্যাঙ্কোর জামিন মঞ্জুর করে। জামিন পেয়ে তিনি জলন্ধরে ফেরার পরে, অনুগামী সন্ন্যাসিনীরা গলায় মালা পরিয়ে, গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছুড়ে স্বাগত জানান ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই বিশপকে।

মনে করা হচ্ছে, বিশপকে স্বাগত জানানো সেই সন্ন্যাসিনীরাই ফাদার কুরিয়াকোসের শেষকৃত্যে এসেছেন ভেবে ক্ষুব্ধ হন অনেকে। তার জেরেই এই সমস্যা ঘটে শেষকৃত্য চলাকালীন।