
দ্য ওয়াল ব্যুরো : অভিযোগ, দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে সাক্ষীদের আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে শেখাচ্ছিলেন আইনজীবী মেহমুদ প্রাচা। বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ তল্লাশি করে তাঁর অফিসে। পুলিশের অভিযোগ, তিন বছর আগে মৃত এক আইনজীবীর নাম করে হলফনামা জাল করেছিলেন প্রাচা। দিল্লি দাঙ্গায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের তিনি মিথ্যা বিবৃতি দিতে শিখিয়েছেন। অফিসে তল্লাশির পরে প্রাচা বলেন, “আমি ভয় পাইনি। এদেশে অত সহজে আইনের শাসন ধ্বংস করা যাবে না।”
পরে আইনজীবী বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি হলফনামা জাল করিনি।” সম্প্রতি দিল্লির এক সিটি কোর্ট দিল্লির পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেয়, আইনজীবীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হোক। তারপর ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের স্পেশাল সেল এফআইআর দায়ের করে ও প্রাচার অফিসে হানা দেয়।
দাঙ্গায় অভিযুক্তদের বেশ কয়েকজনের হয়ে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন প্রাচা। তাঁদের মধ্যে আছেন ছাত্র সংগঠনের নেত্রী গুলফিশা ফতিমা। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ করা হয়েছে। দিল্লির বেশ কয়েকজন আইনজীবী প্রাচার অফিসে পুলিশি তদন্তের ঘটনাকে নিন্দা করেছেন। প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং টুইট করে বলেন, “কারও হয়ে আইনি লড়াই চালানো একটি মৌলিক অধিকার। প্রাচার অফিসে হানা দিয়ে পুলিশ সেই অধিকার লঙ্ঘন করেছে।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। ৫০ জনের বেশি মারা যান। আহত হন আরও অনেকে। বিপুল সম্পত্তির ক্ষতি হয়। বুধবার তার ১৭ হাজার ৫০০ পাতার চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। তাতে নাম আছে ১৫ জনের। তাঁরা সকলেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু ওই আইনের পক্ষে যাঁরা মিটিং-মিছিল করেছিলেন, তাঁদের কারও নাম চার্জশিটে নেই।
চার্জশিটে ২৬০০ পাতা জুড়ে অভিযুক্তদের অপরাধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে কয়েক হাজার পাতার অ্যানেক্সচার। কয়েকটি ক্ষেত্রে সন্ত্রাসদমন আইনে চার্জ আনা হয়েছে।
চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন সাসপেন্ডেড আপ কাউন্সিলার তাহির হুসেন। পুলিশ জানিয়েছে, এখনও তদন্ত চলছে। পরে একটি সাপ্লিমেনটারি চার্জশিট পেশ করা হবে। তাতে আরও কয়েকজন অভিযুক্তের নাম থাকবে।
পুলিশ এদিন আদালত বলে, “চার্জশিটে যে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে দাঙ্গাবাজদের সরাসরি সম্পর্ক ছিল। সিলামপুর ও জাফরাবাদে দাঙ্গা করার জন্য দু’টি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। দাঙ্গায় ওই দু’টি এলাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
পরে বলা হয়েছে, ষড়যন্ত্রকারীরা দাঙ্গার ছক কষেছিল। এলাকার মাঝারি স্তরের নেতারা সেই ছক কার্যকর করার দায়িত্বে ছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দাঙ্গাবাজদের। পুলিশের দাবি, ছাত্ররা ২০ কিলোমিটার হেঁটে দাঙ্গায় অংশহগ্রহণ করতে এসেছিল।
পুলিশের দাবি, নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হচ্ছিল, তা প্রথম থেকেই ছিল অগণতান্ত্রিক চরিত্রের। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য ছিল হিংসায় উস্কানি দেওয়া। পুলিশের মতে, ‘চাক্কা জ্যাম’ বা রাস্তা অবরোধ জাতীয় কার্যকলাপ অগণতান্ত্রিক। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল হিংসায় উস্কানি দেওয়া।